কিশোরীদের অনিয়মিত মাসিক 

কৈশোরের শুরুতে অনেক কিশোরী অনিয়মিত মাসিকসংক্রান্ত সমস্যায় ভোগে। ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একবার মাসিক হওয়াকে নিয়মিত বলা হয়। এর বেশি আগে বা বেশি পরে মাসিক হলে তাকে অনিয়মিত বলা যায়। কৈশোরে অনিয়মিত মাসিক হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

লক্ষ রাখতে হবে, অনিয়মিত মাসিকের সময় কিশোরীর যদি অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয়, তবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পিসিওএস হলে সাধারণত ২-৪ মাস পরপর মাসিক হয়। হঠাৎ ওজন বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মাসিকের সময় অতিরিক্ত বা কম রক্তক্ষরণ হয়। শরীরে বিশেষ করে মুখে অবাঞ্ছিত লোম, মুখে বেশি বেশি ব্রণ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণত হরমোনাল ইমব্যালেন্স বা অস্বাভাবিক পরিবর্তনের জন্য এটা হয়ে থাকে। মেয়েদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষ হরমোনের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য থাকে। পিসিওএস হলে পুরুষ হরমোনের আধিক্য ঘটে, অর্থাৎ অ্যান্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যায়। এ ছাড়া এলএইচ হরমোনের আধিক্য ঘটে, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। এ রোগের কারণে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা তৈরি হতে পারে। এ রোগ ও রোগের উপসর্গ অনেকের ক্ষেত্রে মানসিক দুশ্চিন্তা তৈরি করে, অতিরিক্ত মানসিক চাপে কারও কারও বিষণ্নতা হতে পারে।

ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, কোলস্টেরলের আধিক্য, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যা রোধ করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসকের আওতায় আসা বাঞ্ছনীয়। এ রোগের একটি প্রধান চিকিত্সা হলো শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো, যা মাসিককে নিয়মিত করতে সাহায্য করে।

ওজন কমানো একটি কঠিনপ্রক্রিয়া হলেও মানসিক প্রস্তুতি ও দৃঢ়তা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সাধারণত ৫-১০ শতাংশ ওজন কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম ও প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট পরিশ্রম করার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জন করা যায়। এ রোগে হরমোন দিয়ে মাসিক নিয়মিত রাখা প্রয়োজন হয়।

মূল বার্তা

● কৈশোরের প্রথম দিকে অনিয়মিত মাসিক হলে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনাআপনি ঠিক হয়ে যায়।

● মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব হলে চিকিত্সা নিতে হবে।

● প্রতিটি স্কুলে উচ্চতা ও ওজন মাপার যন্ত্র রাখতে হবে।

● অনিয়মিত মাসিক, মুটিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্ষুধা বা খাদ্য গ্রহণ, অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানে অতিরিক্ত লোম, এসব উপসর্গ নির্দেশ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

● ওজন কমানোর মাধ্যমে অনেক উপসর্গ দূর করা সম্ভব।

● শরীরের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নির্ধারিত পর্যায়ে রাখতে হবে।

● খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

● বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিতে হবে এবং চিকিৎসকের আওতায় থাকতে হবে।

আগামীকাল পড়ুন: মাসিকের ব্যথা কমাতে খাবারের ভূমিকা