খাবারে প্রাণঘাতী বিষক্রিয়া এড়াতে যেসব বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন

কারণে–অকারণে ঘরে থেকে যায় বাড়তি খাবার। এই বাড়তি খাবার আমরা পরবর্তী দিনের জন্য সংরক্ষণ করি। না জানার কারণে খাবার সংরক্ষণ করতে গিয়ে কিছু ভুলও করে ফেলি আমরা। ফলে সহজেই খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটে। যা থেকে নানান রোগবালাই থেকে শুরু করে হতে পারে মৃত্যু পর্যন্ত। অর্থাৎ বিষয়টা মোটেও হেলাফেলার নয়। বাড়তি খাবার বাইরে ফেলে রাখলে তাতে ক্ষতিকর কিছু ব্যাকটেরিয়া, যেমন স্টেফাইলোকক্কাস, ক্যাম্ফাইলোব্যাকটার, ই-কোলাই এবং সালমানেলা জন্মাতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে অনেক প্রাণঘাতী রোগ। তাই বাড়তি খাবার কতটা সময় বাইরে রাখছেন, কোন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করছেন এবং তা কতটা পরিষ্কার রাখছেন—এসবের ওপর নির্ভর করে খাবারে বিষক্রিয়া ঘটেছে কি না। তাই জেনে রাখুন খাবারে বিষক্রিয়া এড়াতে যেসব নিয়ম মেনে চলবেন—

হঠাৎ ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেলে বা বিদ্যুৎ চলে গেলে মাংস সংরক্ষন করতে হবে ভিন্ন উপায়েছবি: প্রথম আলো

দুই ঘণ্টার হিসাব মনে রাখুন
চুলা বা ওভেন থেকে গরম খাবার এনে তা খেতে খেতে কমবেশি দুই ঘণ্টা লাগতে পারে। এই দুই ঘণ্টা ধরে যেন গরম খাবার উষ্ণই থাকে এবং ঠান্ডা খাবার যেন শীতল থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গরম খাবার উষ্ণ রাখতে হটপট ব্যবহার করা যেতে পারে। ঠান্ডা খাবার শীতল রাখতে খাবারের পাত্রের চারপাশে কিছু বরফের টুকরা রাখতে পারেন। আমাদের দেশে বছরের একটা বড় সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৪ বা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে থাকে। তাপমাত্রা যদি ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, তবে খাবার দুই ঘণ্টার বেশি বাইরে না রাখাই ভালো। কারণ, এ রকম উষ্ণ পরিবেশে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া খুবই দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে।

খাবার ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখুন
টাটকা গরম খাবার বেশ কিছুটা সময় বাইরে রেখে দিন। গরম ভাবটা কেটে গেলে ফ্রিজে রাখুন। কখনোই গরম খাবার সরাসরি ফ্রিজে রাখবেন না। এতে ফ্রিজের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয় এবং অন্য খাবারের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

উপযুক্ত ঢাকনাযুক্ত পাত্র ব্যবহার করুন
খাবারের অতিরিক্ত অংশ ফ্রিজে রাখার আগে তা উপযুক্ত পাত্রে ঢালুন। পাত্রের ঢাকনা বা মুখ যেন বায়ুরোধী হয়, তা নিশ্চিত করুন। এরপর তা ফ্রিজে রাখুন। বায়ুরোধী ঢাকনাযুক্ত পাত্রে রাখলে খাবার সহজে ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয় না, ফ্রিজের মধ্যে খাবার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে না এবং ফ্রিজের অন্যান্য খাবারের দুর্গন্ধ তাতে প্রবেশ করতে পারে না।

পাত্রের গায়ে দিন–তারিখ লিখে রাখুন
প্রতিটি খাবারের জন্য আলাদা আলাদা পাত্র ব্যবহার করুন। কবে খাবারটি ফ্রিজে রাখছেন, সেই দিন–তারিখ লিখে রাখুন পাত্রের গায়ে। পরে যখন খাবারটি ফ্রিজ থেকে বের করে খাবেন, তখন খাবারটি ঠিক কত দিনের পুরোনো এবং আদৌ তা খাওয়া উচিত হবে কি না, তা বুঝতে পারবেন।

ফ্রিজের ভেতরে যথাযথ তাপমাত্রা বজায় রাখুন
যেকোনো খাবার নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই তাপমাত্রার নিচে সাধারণত খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে খাবার ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারলে তা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে।

বারবার গরম করে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
খাবার ফ্রিজে রাখার পর তা বের করে আবার গরম করে খাওয়া আমাদের অভ্যাস। ঠান্ডা খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে গরম করে খেয়ে বাড়তি অংশ আবার ফ্রিজে রাখলে ধীরে ধীরে খাবারের গুণগত মান হ্রাস পায়। এভাবে বারবার ঠান্ডা খাবার গরম করতে থাকলে খাবারটি ব্যাকটেরিয়ার জন্য স্বর্গ হয়ে ওঠে। ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে খাবার তাই সহজেই বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তাই খাবারে বিষক্রিয়া এড়াতে বারবার তা গরম করে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

সূত্র: হাফিংটন পোস্ট

আরও পড়ুন