পিপাসা মেটাতে স্যালাইন পানি খেলে কী হয়

ছবি: প্রথম আলো

আমাদের বয়স-ওজন-উচ্চতা অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে পানি পান করার প্রয়োজন হয়। প্রচণ্ড গরমে পানির চাহিদা থাকে বেশি। অনেক ক্ষেত্রে আমরা পিপাসা মেটাতে পানির পাশাপাশি অন্য কিছু পান করে থাকি। যেমন ফলের রস, লেবুর শরবত, কোমল পানীয়। তবে তৃষ্ণা নিবারণে সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।

কেন বিশুদ্ধ পানি সবচেয়ে উপযুক্ত

আমাদের শরীরের রক্ত, প্রস্রাবসহ বেশির ভাগ তরলের পিএইচ ৭ দশমিক ৩ থেকে ৭ দশমিক ৪। আবার প্রতিটি অঙ্গ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এই নির্দিষ্ট পিএইচ ও তাপমাত্রা বজায় রাখতে বিশুদ্ধ পানির বিকল্প নেই। কারণ, বিশুদ্ধ পানির পিএইচ মান ৭ এবং এর তাপমাত্রাও আমাদের শরীরের তাপমাত্রার খুব কাছাকাছি।

অন্য পানীয় কতটুকু

ফলের রস: ফলের রস নিঃসন্দেহে অনেক উপকারী ও ভিটামিন-মিনারেল যুক্ত। কিন্তু তা বেশি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ফলের রসে শরীরের পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই দিনে ২০০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার–এর বেশি খাওয়া যাবে না। আবার কোনো কোনো ফলে চিনি বেশি। ফলের রসে প্রচুর ইলেকট্রোলাইট থাকে। বেশি খেলে পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে; যা কিডনিতে চাপ তৈরি করবে। 

লেবুর শরবত: লেবুর শরবত বেশ স্বাস্থ্যবান্ধব। কখনো কখনো স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। প্রথমত, লেবু অ্যাসিডিক ফল, এর পিএইচ ৭–এর কম। তাই অতিরিক্ত লেবুর শরবতে পিএইচের ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হবে। 

স্যালাইন পানি কেন নয়

স্যালাইন ডায়রিয়া রোগীদের জন্য। স্যালাইনে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড থাকে। শুধু পিপাসা মেটাতে স্যালাইন খেলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হবে। কারও কারও শরীরে পানি জমতে পারে। কিডনি ও হৃদ্‌রোগীদের অকারণে স্যালাইন খাওয়া বিপজ্জনক। স্যালাইন সঠিক নিয়মে না তৈরি করলে মৃত্যুঝুঁকিও থাকে। 

ঠান্ডা পানি খাবেন না

অনেকে পিপাসা মেটাতে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করেন। এতে শরীরে তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়। ঠান্ডা পানি বিপাকে শরীরের অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হয়।

কোমল পানীয় নয়

কোমল পানীয় শরীরের জন্য সব দিক দিয়েই ক্ষতিকর। তাই তৃষ্ণা নিবারণে এগুলো কখনো বেছে নেবেন না। 

আরও পরামর্শ

● বাড়িতে সঠিক উপায়ে পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে পান করুন। 

● পানি পানের আগে নিশ্চিত হতে হবে, এতে আর্সেনিক ও আয়রনের পরিমাণ অনুমোদিত সীমার মধ্যে আছে কি না। 

●এই গরমে প্রচুর পানি পানের কথা বলা হচ্ছে। তবে কিডনি ও হৃদ্‌রোগীরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল