বদ্ধ স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি

শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য খাদ্য ও পুষ্টির পাশাপাশি যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আলো–বাতাসে পরিপূর্ণ খোলামেলা বাসস্থান। কারণ, এই পরিবেশ তাদের আনন্দের সঙ্গে নিরাপদ চলাফেরা, ভাবের আদান-প্রদান ও খেলাধুলার সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি রোগজীবাণুর বংশবিস্তার রোধ করে সংক্রমণঝুঁকি কমায়। কিন্তু যখন বাসস্থানের পরিবেশ হয়ে যায় স্যাঁতসেঁতে, গুমোট, অন্ধকার, বাতাস চলাচল কম ও বদ্ধ, তখন নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।

এই পরিবেশে বসবাসরত শিশুদের যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

  • আবদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে ঘরে রোগজীবাণু, বিশেষ করে ভাইরাস (আরএসভি), ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের জন্ম এবং তাদের বংশবিস্তার অনেক গুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া আবদ্ধ ঘরে গ্যাসের আধিক্য, যেমন কার্বন মনোক্সাইড; বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, যেমন আরশোলা, মাইট ইত্যাদি থাকে। যা সেখানে বসবাসকারী শিশুদের ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।

  • শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের কার্যক্রম ও শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে অপরিপক্ব থাকায় তারা সহজেই জীবাণুর সংক্রমণের শিকার¬হয়, শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিতে পড়ে যায়। এ ছাড়া যেহেতু শিশুরা দিনের বেশির ভাগ সময় ঘরেই কাটায় এবং তাদের শ্বাস–প্রশ্বাসের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, তাই আবদ্ধ ও স্যাঁতসেঁতে ঘরের বিষাক্ত জিনিসগুলো নিশ্বাসের সঙ্গে তাদের ফুসফুসে বেশি ঢোকে।

  • স্যাঁতসেঁতে ঘরে বসবাসরত শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের ওপর এই আঘাত শুধু যে তাদের জন্মের পরে শুরু হয়, তা নয়, যেসব গর্ভবতী মা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বাস করেন, তাঁর গর্ভস্থ শিশু গর্ভে থাকার সময় থেকেই এই প্রতিকূল পরিবেশের শিকার হয়।

  • শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় হাঁপানি বা অ্যাজমা। যাদের হাঁপানির ঝুঁকি আছে বা যারা ইতিমধ্যেই হাঁপানিতে ভুগছে, তাদের রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।

  • হাঁপানির পাশাপাশি স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বাস করা দুই বছরের কম বয়সী শিশুর শ্বাসনালির আরেকটা রোগ ব্রঙ্কিওলাইটিসের ঝুঁকিও অনেক গুণ বেড়ে যায়।

  • এ ছাড়া যেসব শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জন্ম বা ছোটবেলা থেকেই দুর্বল বা কম, তারা একবার কোনো সংক্রমণে আক্রান্ত হলে রোগজীবাণু খুব দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং অবস্থা মারাত্মক পরিণতির দিকে চলে যায়।

  • অনেক সময় তাদের ফুসফুসে মারাত্মক ফাঙ্গাল সংক্রমণ বা মারাত্মক নিউমোনিয়াও হতে পারে।

  • এ পরিবেশে শিশুরা সারাক্ষণ হাঁচি–কাশিতে ভুগতে থাকে। অনেক শিশুর দীর্ঘমেয়াদি সাইনুসাইটিস রোগ হতে পারে। শিশুরা নানাবিধ চর্মরোগ, যেমন একজিমা, স্কিনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি রোগে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।

করণীয়

  • যেসব কারণে ঘর স্যাঁতসেঁতে, বাসস্থান আবদ্ধ, তা দূর করতে সচেষ্ট হতে হবে। জানালা–দরজা খুলে বাতাস চলাচল করতে দিতে হবে।

  • ডিহিউমিডফাইয়ার ব্যবহার।

  • অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশুবিশেষজ্ঞ