হেপাটাইটিস এ: কীভাবে বুঝবেন, কী করবেন

হেপাটাইটিস মানে যকৃত বা লিভারের প্রদাহ। হেপাটাইটিসের কারণ মূলত নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস। তবে বর্তমানে মানে এই বর্ষা মৌসুমে সাধারণত শিশুরা হেপাটাইটিস এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয় বেশি। অবশ্য শিশুদের অন্যান্য জীবাণু যেমন হেপাটাইটিস বি, সি, ডি, ই দিয়েও সংক্রমণ হতে পারে। তবে এ সময়ে এ ভাইরাসই সবচেয়ে পরিচিত সংক্রামণকারী।

হেপাটাইটিস এ মূলত দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। সুস্থ শিশু বা ব্যক্তির শরীরে দূষিত খাবার বা পানি পান করার মাধ্যমে ভাইরাসটি প্রবেশ করে ও লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। আমাদের দেশে এ সময়ের আখের রস, দূষিত কেনা পানি, অনাবৃত ও দূষিত ফলের রস, জুস বা কাঁচা ফল শিশুরা খেয়ে থাকে। স্কুলের সামনে খোলা খাবার, ফুচকা, চটপটি, আচার, কেটে রাখা শশা, আমড়া ইত্যাদি শিশুদের বেশ প্রিয়। এ সব খাবারের মাধ্যমে এ রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া শৌচাগার ব্যবহারের পর সঠিকভাবে হাত না ধোয়া এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তের অন্যতম কারণ।

হেপাটাইটিস এর কারণে জন্ডিস হয়, মানে হাতের তালু, চোখ হলুদ হয়ে যায়; প্রস্রাবের রং হলুদ হয়। প্রচণ্ড অরুচি, পেট ব্যথা, বমি, বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, হালকা হলুদ রঙের মলত্যাগ, জ্বর, চুলকানি, শরীরে ব্যথা—এসবই মূলত এ রোগের লক্ষণ। এ সব লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত দুই মাসের মধ্যে এ রোগটি সেরে যায়।

জন্ডিস হলে শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রামে রাখতে হবে যেন শিশু বেশি দুর্বল হয়ে না পড়ে।

শিশুর বমি বমি লাগলে বা বমি হলে পেট ভরে খাওনোর পরিবর্তে অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। অতিরিক্ত তেল–মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। বাড়িতে তৈরি বিশুদ্ধ খাবার, ফলের রস খাওয়ানো যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথা ও জ্বরের বা কবিরাজি ওষুধ খাওয়াবেন না।

জন্ডিসে আক্রান্ত শিশুর ঘুম না হলে বা ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তিত হলে, খিঁচুনি হলে, শিশুর আচরণে কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখা দিলে বা অচেতন হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডা. রাহনুমা আমিন, চিকিৎসা কর্মকর্তা, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল