আমিষের দারুণ এক উৎস ডাল। ছোলা, মুগ, মসুর, মটরশুঁটি—সবকিছুতেই রয়েছে আমিষ। যত ধরনের উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে আমিষ পাওয়া যায়, তার মধ্যে ডাল অন্যতম। দামও মাছ-মাংসের তুলনায় কম, আর পাওয়াও যায় সারা বছর। কাঁঠালের বিচি, শিমের বীজের মতো নানা ধরনের বীজেও আমিষ রয়েছে, যখন যে বীজ পাওয়া যায়, তা-ও রাখুন খাদ্যতালিকায়।
পুষ্টি নিশ্চিত করতে
রোজকার পুষ্টির একটি বড় অংশ মিটিয়ে নিতে পারবেন ডাল থেকেই। তবে মনে রাখতে হবে, উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া সব আমিষই অবশ্য দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ। তা আপনি ডালই খান কিংবা বীজজাতীয় খাবার। এর কারণ হলো উদ্ভিজ্জ আমিষে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সব কটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে না। তাই উদ্ভিজ্জ আমিষের সঙ্গে শস্যের মিশ্রণ ঘটাতে পারেন, যাতে আবার ওই অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, যা ডালে নেই। এভাবে সমন্বয় করলে আপনার প্রয়োজনীয় কোনো অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি হয় না। এই যেমন আপনি খিচুড়ি খেতে পারেন কিংবা খেতে পারেন হালিম। মাংস ছাড়াও যদি হালিম রান্না করেন, তা থেকেও কিন্তু আপনি সব অ্যামিনো অ্যাসিডই পেয়ে যাবেন।
কেবল পুষ্টি নয়, চাই স্বাদও
ঘন ডাল বা পাতলা ডালের চেয়ে মাঝারি ঘনত্বের ডাল খাওয়া বেশি ভালো। এটি থেকে আমিষ পাবেন ঠিকঠাক।
চাইলে নানা রকম সবজি বা শাক দিয়েও ডাল রান্না করতে পারেন। স্বাদে ভিন্নতা আসবে। পুষ্টিও পাবেন। ডালের বড়াও করতে পারেন।
২৪ ঘণ্টার খানিকটা বেশি সময় ডাল বা ছোলা ভিজিয়ে রাখলে তা অঙ্কুরিত হয়। অঙ্কুরিত অবস্থায় এগুলো সামান্য পরিমাণে কাঁচাও খেতে পারেন। তাতে আমিষের পাশাপাশি মিলবে ভিটামিন সি।
আরও যা
ডাল খেলে কারও কারও অ্যাসিডিটি হয়। ঘণ্টা দেড়েক ডাল ভিজিয়ে রেখে এরপর ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করলে অ্যাসিডিটির প্রবণতা কমে। এ ছাড়া মসুর ডালের পরিবর্তে মুগের ডাল বেছে নিতে পারেন। মুগের ডাল ভেজে এরপর রান্না করা হলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হবে না।
খেসারির ডাল অতিরিক্ত খাবেন না। এই ডাল রোজ খাওয়া উচিত নয়। এই ডাল ল্যাথিরিজমের কারণ। এই রোগে পা দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগী স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না। তাই মাসে এক-দুই দিনের বেশি খেসারির ডাল খাবেন না, আর পরিমাণে খুব বেশিও নয়।
কিডনির রোগ থাকলে কিংবা ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকলে ডাল বা বীজজাতীয় খাবারের বিষয়ে বিধিনিষেধ থাকে। তাই এ ধরনের রোগ থাকলে আপনি কতটা ডাল বা বীজজাতীয় খাবার খেতে পারবেন, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলুন।
শম্পা শারমিন খান: সহযোগী অধ্যাপক, খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স, আজিমপুর, ঢাকা।