নবজাতকের চোখ দিয়ে কি পানি পড়ে?

জন্মের পরপরই অনেক নবজাতকের এই দরজা বন্ধ থাকে। সে কারণে এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে চোখের পানি নিষ্কাশন হতে পারে না।

ছোট্ট শিশু। কয়েক দিন মাত্র বয়স। মা লক্ষ করলেন নবজাতকের এক বা দুই চোখের কোণেই ময়লা জমছে। সেই সঙ্গে অল্প অল্প করে পানিও আসছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চোখের পাতা আঠার মতো লেগে থাকছে, শিশুটি চোখ খুলতে পারছে না। এমনটি কেন হয়?

আমাদের দুই চোখ ও নাকের মাঝখানে একটা সুড়ঙ্গপথের (ন্যাসো-ল্যাক্রিমাল ডাক্ট) মতো আছে। এই পথ দিয়ে চোখ থেকে পানি বা ময়লামিশ্রিত পানি নাকে চলে যায়। এই সুড়ঙ্গপথের এক প্রান্তে একটা দরজার মতো থাকে। জন্মের পরপরই অনেক নবজাতকের এই দরজা বন্ধ থাকে। সে কারণে এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে চোখের পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। ফলে সেই পানি উপচে বাইরে চলে আসে, চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কখনো ইনফেকশন হলে নবজাতকের দুই চোখের কোণে হলুদ বা ঘোলাটে ময়লামিশ্রিত পানি জমে থাকে।

নাক ও চোখের কোনায় মালিশ করলে উপকার মিলবে।
ছবি: প্রথম আলো

এ ক্ষেত্রে চিন্তিত না হয়ে একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। নাক ও চোখের কোনার জন্য তিনি মালিশ শিখিয়ে দেবেন। এটা রোজ করলে উপকার মিলবে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ লাগবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করলে এবং মালিশটি মনোযোগ দিয়ে নিয়মিত করলে কিছুদিনের মধ্যে নবজাতকের এই রোগ সেরে যাবে।

এই সুড়ঙ্গপথে জন্মগত কোনো ত্রুটিও থাকতে পারে। সুড়ঙ্গের মুখ তৈরি হয়নি কিংবা ভেতরে সুড়ঙ্গপথ বা নেত্রনালিতে কোনো ত্রুটি আছে। সে ক্ষেত্রেও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলে তিনি চিকিৎসা দেবেন। সার্জারির প্রয়োজন মনে করলে শিশুর নির্দিষ্ট বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলবেন।

এ ছাড়া শিশুদের চোখে ইনফেকশন হলে, চোখে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে, চোখে কোনো আঘাত লাগলে বা ফরেন বডি প্রবেশ করলে কিংবা জন্মগত গ্লুকোমা থাকলেও এ রকম অনবরত পানি পড়তে পারে। এতে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

মনে রাখবেন, শিশুদের চোখের সমস্যায় যত দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন, তত দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব।

লেখক: মেডিকেল অফিসার, বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট