স্ট্রোক যেভাবে প্রতিরোধ করবেন

অনেকেই স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাককে এক মনে করেন। আসলে স্ট্রোক হলো ব্রেনের (মস্তিষ্ক) অসুখ আর হার্ট অ্যাটাক হৃৎপিণ্ডের। বিশ্বজুড়ে অকালমৃত্যুর প্রথম কারণ ক্যানসার, পরের দুটি যথাক্রমে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। প্রতিবছর এক লাখ মানুষের মধ্যে ১৮০ থেকে ৩০০ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন।

স্ট্রোক সাধারণত তিন ধরনের। টিআইএ, প্রোগ্রেসিভ স্ট্রোক ও কমপ্লিটেড স্ট্রোক। টিআইএ হলো সাময়িক বা ক্ষণিকের সমস্যা। এ ধরনের স্ট্রোক হলে আক্রান্ত রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু প্রোগ্রেসিভ স্ট্রোক হলে রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে আরও খারাপ হতে থাকে। আবার কমপ্লিটেড স্ট্রোকে একটা পর্যায়ে গিয়ে রোগীর অবস্থার আর অবনতি হয় না।

কারণ

স্ট্রোকের কারণও নানাবিধ। রক্তনালি ব্লক হয়ে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে যে স্ট্রোক হয়, তা সেরিব্রাল ইনফার্কশন। মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়; একে বলে হেমোরেজিক স্ট্রোক। ৮৫ শতাংশ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে। মাত্র ১৫ শতাংশ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে।

ইসকেমিক স্ট্রোকে রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণ হলো রক্তে কোলেস্টেরল বা খারাপ চর্বির আধিক্য। ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, অলস জীবনযাপন, স্ট্রেস, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, হার্টের অসুখ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ। এ ছাড়া রক্তনালির জন্মগত ত্রুটির কারণেও হতে পারে। 

স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।

যেভাবে প্রতিরোধ

  • স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে হলে রক্তের চর্বি কমাতে হবে।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

  • শর্করা ও চর্বিযুক্ত খাবার কম খেয়ে শাকসবজি, ফল ও সালাদ বেশি খেতে হবে।

  • বয়স্ক মানুষের গরু বা খাসির মাংস বর্জন করা বাঞ্ছনীয়।

  • প্রতিদিন ৩০–৪০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটতে হবে।

  • ধূমপান ও অ্যালকোহলের অভ্যাস থাকলে, তা বাদ দিতে হবে।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।

  • হেমোরেজিক স্ট্রোক প্রতিরোধ করার জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা বেশি জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। কোনো বেলার ওষুধ যেন বাদ না যায়। অনিয়মিত ওষুধ গ্রহণে হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে স্ট্রোক হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়