ভিন্নধর্মী যক্ষ্মা সম্পর্কে জানুন

যক্ষ্মা সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। তবে যক্ষ্মার জীবাণু বলতে প্রথাগতভাবে যে জীবাণুটিকে জানি, সাম্প্রতিক সময়ে সেটির বাইরে ভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণের হার বাড়ছে। এগুলো দিয়ে সংক্রমণ হলে তাকে বলা হয় অ্যাটিপিক্যাল বা ভিন্নধর্মী যক্ষ্মা।

প্রচলিত যক্ষ্মার জীবাণুর মতো এগুলো ছোঁয়াচে নয়, অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়ায় না। আবার সাধারণ যক্ষ্মার ওষুধেও পুরোপুরি নির্মূল হয় না। এসব জীবাণু আমাদের চারপাশের পরিবেশে থাকে। মাটি, পানি, খাবারের মধ্যে এদের উপস্থিতি স্বাভাবিক। তবে এর ফলে সাধারণত মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। কেবল নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে এগুলো দিয়ে সংক্রমণ হয়, আর তখনই বাধে বিপত্তি।

উপসর্গ

শরীরের কোথায় সংক্রমণ হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে রোগের উপসর্গ। ফুসফুসে সংক্রমণ হলে কাশি হয়, যা দীর্ঘদিন ভোগায়। কফও বের হয়। কফের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে। জ্বর, ক্ষুধামান্দ্য, শারীরিক দুর্বলতা, ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ক্লান্তিও হতে পারে।

আবার লসিকা গ্রন্থির সংক্রমণ হলে গ্রন্থিটি ফুলে যেতে পারে, গ্রন্থি থেকে রস বা পুঁজ নিঃসরণ হতে পারে। যেকোনো অংশেই সংক্রমণ হয়ে থাকুক না কেন, উপসর্গগুলো এমন হয়, যা সাধারণ চিকিৎসায় সারে না।

ত্বকে সংক্রমণ হলে সেখানে গোটা হতে পারে, ফোঁড়া হতে পারে। ত্বকে আলসার বা ক্ষতও হতে পারে, যা দেখতে সাধারণ ক্ষতের মতো নয় এবং সহজে সারে না।

যাঁদের ঝুঁকি বেশি

ফুসফুসে যাঁদের পুরোনো ক্ষত রয়েছে কিংবা যাঁদের ফুসফুস রোগের কারণে কিছুটা দুর্বল, তাঁদের এ ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। ডায়াবেটিস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ ও অপুষ্টিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে।

চিকিৎসা

রোগের তীব্রতা ও জীবাণুর ধরনের ওপর নির্ভর করে এক-দুই বছর পর্যন্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। চিকিৎসায় অনিয়ম করা যাবে না। ত্বক বা লসিকা গ্রন্থির সংক্রমণ হলে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজনও হতে পারে।

প্রতিরোধ

যেকোনো ক্ষতকে গুরুত্ব দিন। দুর্ঘটনার ক্ষত, অস্ত্রোপচারজনিত ক্ষত বা অন্য যেকোনো কারণে সৃষ্ট ক্ষতের যত্ন নিন। ড্রেসিং বা ক্ষত পরিষ্কারের কাজ করতে হবে জীবাণুমুক্ত (স্টেরাইল) উপকরণ দিয়ে।

  • ডা. আব্দুস শাকুর খান, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ লাং ফাউন্ডেশন