এই ৫ সাপ্লিমেন্ট অহেতুক খেয়ে বিপদ ডেকে আনছেন না তো?

ক্যালসিয়াম, আয়রন কিংবা বিভিন্ন রকম ভিটামিন–জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করেন অনেকেই। শরীরে নির্দিষ্ট কোনো পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকলে খাবারের পাশাপাশি ওষুধের মাধ্যমে ঘাটতি মেটানোর প্রয়োজন পড়ে। চিকিৎসক তেমনটাই পরামর্শ দেন। কেউ কেউ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে এমনিতেও ভিটামিন ওষুধ লিখে দিতে অনুরোধ করেন। অনেকে আবার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই এ–জাতীয় ওষুধ সেবন করেন। তবে আপাতদৃষ্টে ‘সাধারণ’ এসব ওষুধও যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়, হোক না তা নিতান্ত ‘সাধারণ’ ভিটামিনছবি: পেক্সেলস

অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। হোক না তা নিতান্ত ‘সাধারণ’ ভিটামিন। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম বা আয়রনের মতো বিভিন্ন খনিজ উপাদান কিন্তু রোজকার খাবার থেকেই পাওয়া সম্ভব। তা ছাড়া কিছু উপাদান আমাদের শরীরে সঞ্চিতও হয়। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের তাই ভিটামিন বা অন্য কোনো পুষ্টি উপাদান ওষুধ হিসেবে গ্রহণের প্রয়োজনই পড়ে না। কোনো উপাদানের ঘাটতি হলে কেবল তখনই সম্পূরক হিসেবে ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, সেটিও নানান দিক বিবেচনা করে, নির্দিষ্ট মাত্রায়। অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, এমন কিছু সম্পূরক ওষুধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান

আয়রন

আয়রন আমাদের রক্তের লোহিত কণিকার অন্যতম এক উপাদান। এর ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতায় ভোগেন অনেকেই। বিশেষত আমাদের দেশের নারীরা। তাই অনেকেরই প্রয়োজন হয় সম্পূরক আয়রন। কিন্তু এই সম্পূরক আয়রন যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন, তাহলে তা লিভার বা হৃৎপিণ্ডে জমা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে এসব অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। আয়রন ওষুধের প্রভাবে অনেকে পেটব্যথা ও কোষ্টকাঠিন্যেও ভোগেন। কোনো কোনো গবেষণায় এমনও দেখা গেছে, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত আয়রন ওষুধ গ্রহণ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন

ক্যালসিয়াম

ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ক্ষয় হয়। কিন্তু কেউ যদি ক্যালসিয়াম ওষুধ অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি ভুগতে পারেন হাড়ের ব্যথায়। অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের কারণে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দের ব্যত্যয় ঘটতে পারে। এটি একটি মারাত্মক ব্যাপার। তা ছাড়া ক্যালসিয়ামের আধিক্যে কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর হতে পারে, বমিভাব ও কোষ্টকাঠিন্যও হতে পারে। কেউ কেউ অবসন্ন ও দুর্বল হয়ে পড়েন অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের কারণে।

আরও পড়ুন

ভিটামিন ডি

শরীরে ভিটামিন ডি বেড়ে গেলে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও বাড়ে। তাই ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে যেসব সমস্যা সৃষ্টি হয়, ভিটামিন ডি বেড়ে গেলেও সেসবের ঝুঁকি বাড়ে।

আরও পড়ুন

ভিটামিন ই

ত্বক বা চুলের সুস্থতার জন্য ভিটামিন ই গ্রহণ করেন অনেকে। কিন্তু অতিরিক্ত ভিটামিন ই গ্রহণ করলে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, বমিভাব কিংবা পাতলা পায়খানা হতে পারে। এই ভিটামিনের আধিক্যের কারণেও অবসন্নতা ও দুর্বলতায় ভুগতে পারেন কেউ কেউ। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হলো, এর আধিক্যের কারণে কারও কারও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। বিশেষত যাঁদের রক্ত পাতলা করার কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করতে হয়, তাঁদের শরীরে ভিটামিন ই বেড়ে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অনেক বেশি।

আরও পড়ুন

মাল্টিভিটামিন

শারীরিক দুর্বলতার জন্য অনেকেই মাল্টিভিটামিন ওষুধ গ্রহণ করেন। কিন্তু এসব ওষুধের কারণে পেটব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা কিংবা চোখ জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিভারের কার্যক্ষমতা ব্যাহত হয়।

শেষ কথা

নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে অনেক ‘সাধারণ’ উপাদানই মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া এসব ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। বরং এসব সম্পূরক ওষুধের বদলে সুষম খাদ্যাভ্যাসের প্রতিই বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন