বড়দের জলবসন্ত হলে কী করবেন

বড়দেরও হতে পারে জলবসন্ত
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

অনেকের ধারণা চিকেন পক্স বা জলবসন্ত কেবল শিশুদের রোগ। আসলে তা নয়, বড়দেরও হতে পারে জলবসন্ত।

অত্যধিক ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষ শৈশব বা কৈশোরেই জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বলা হয়, জলবসন্ত একবার হলে শরীরে আজীবনের জন্য এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়। তাই জলবসন্ত বড়দের ক্ষেত্রে কমই হতে শোনা যায়। যদি কারও ছোটবেলায় জলবসন্ত না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে জলবসন্তে আক্রান্ত হতে পারেন।

বড়দের ক্ষেত্রেও রোগের লক্ষণ একই। শরীরে ব্যথা, ম্যাজমেজে ভাব, সঙ্গে ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো পানিভর্তি জল গোটা উঠতে পারে। তবে ছোটদের চেয়ে বড়দের ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ বেশির ভাগ সময় গুরুতর হয়। রোগীর সংস্পর্শে এলে হাঁচি-কাশি, ফুসকুড়ির তরল থেকে, এমনকি রোগীর ব্যবহার করা কাপড়চোপড় থেকেও ছড়াতে পারে এই রোগ। শরীরে ফুসকুড়ি ওঠার ৭ থেকে ১০ দিনের মাথায় তা শুকাতে শুরু করে। তবে দুর্বলতা থাকতে পারে আরও বেশ কিছু দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জলবসন্ত এভাবেই সেরে যায়। কিন্তু কিছু কিছু সময় ফুসকুড়িতে প্রদাহ হতে পারে, হতে পারে রক্তের প্রদাহ যাকে সেপসিস বলা হয়। ফুসফুস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ–সংক্রান্ত জটিলতাও মাঝেমধ্যে দেখা যায়।

পূর্ণবয়স্কদের জলবসন্ত হলে আরও কিছু কারণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন রোগী যদি গর্ভবতী হন, যদি কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে (যেমন যারা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, যাঁদের বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন হয়েছে, এইচআইভি এইডসে ভুগছেন কিংবা এমন কিছু ওষুধ খাওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেছে) তাঁদের ক্ষেত্রে জটিলতা হতে পারে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।

এমনিতে জলবসন্ত ভাইরাসঘটিত রোগ বলে তেমন কোনো ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণত পর্যাপ্ত পানি বা তরল খাবার খাওয়া, বিশ্রামে থাকা, জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ যথেষ্ট। ক্ষেত্র বিশেষে চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ, ফুসকুড়িতে ব্যবহারের জন্য ক্রিম বা লোশন দরকার হতে পারে। প্রয়োজন বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক, জটিলতা হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। আর সংক্রমণ রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তো নিতেই হবে।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে জলবসন্তজনিত আরও একটি সমস্যা হতে পারে। যাকে বলা হয় শিংগলস বা কটিদাদ। কারও যদি জলবসন্ত হয়, তাহলে ভ্যারিসেলা জোসটার ভাইরাস স্নায়ুকোষে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যেতে পারে অনির্দিষ্টকালের জন্য। পরবর্তী সময়ে কোনো সময়, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে বা যাঁদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের ক্ষেত্রে শরীরের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ফুসকুড়ি, সঙ্গে মারাত্মক জ্বলুনি আর ব্যথা নিয়ে রোগী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে পারেন। শিংগলসের জন্য চিকিৎসাপদ্ধতি ভিন্ন।

ডা. শাহনুর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল