পুরুষের সমস্যা ভেরিকোসিল কেন হয়, চিকিৎসা কী?

ভেরিকোসিল থাকলে টেস্টোসটেরন হরমোন তৈরি কমে যেতে পারেছবি: আনস্প্ল্যাশ

অণ্ডকোষ বা টেস্টিসের শিরাগুলো যখন অনেক মোটা হয়ে যায়, তাকে ভেরিকোসিল বলে। ভেরিকোসিল অণ্ডকোষে ব্যথার অন্যতম কারণ। ভেরিকোসিল আর ভেরিকোস ভেইন এক নয়; ভেরিকোস ভেইন সাধারণত পায়ের মোটা ও আঁকাবাঁকা শিরাকে বোঝায়।

ভেরিকোসিলের সঠিক ও সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো মাইক্রোসার্জিক্যাল ভেরিকোসিলেকটমি।

ভেরিকোসিলে সমস্যা

ভেরিকোসিলের জন্য অণ্ডকোষ/ অণ্ডথলি মোটা দেখায়, হালকা ধরনের বিরক্তিকর ব্যথা থাকে; যা অণ্ডকোষ, কুঁচকি হয়ে পশ্চাৎ পিঠেও যেতে পারে। শিশুকাল বা যৌবনের শুরুতে ভেরিকোসিল হলে অণ্ডকোষ ছোট হয়ে যেতে পারে। ভেরিকোসিল থাকলে অণ্ডকোষের তাপমাত্রা ও ফ্রি–রেডিকেল বেড়ে যায়, ফলে স্বাভাবিক শুক্রাণু উৎপাদন ও এর চলন ব্যাহত হয়। শুক্রাণুর এসব সমস্যা পুরুষের বন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। তা ছাড়া ভেরিকোসিল থাকলে অণ্ডকোষ থেকে টেস্টোসটেরন হরমোন তৈরি কমে যেতে পারে, এ কারণে যৌন দুর্বলতা ও যৌন সম্পর্কে অনাগ্রহ দেখা দিতে পারে।

কারণ

অণ্ডকোষের শিরাগুলো যদি ঠিকভাবে রক্ত অণ্ডকোষ থেকে পেটের ভেতর বহন করতে না পারে, তাহলে ভেরিকোসিল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিরার ভেতরের ভালভগুলো নষ্ট হয়ে যায় বা কাজ করে না। তা ছাড়া পেটের ভেতরের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ রক্ত রিফ্লাক্স হয়ে বা উল্টোপথে অণ্ডকোষে চলে এলে সেখানকার তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

রক্ত জমে থাকতে থাকতে শিরাগুলো ফুলে যায় ও আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। অণ্ডকোষের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, ফ্রি–রেডিকেল ও শুক্রাণুর ডিএনএতে ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে ভেরিকোসিল শুক্রাণু উৎপাদন ও চলনের ক্ষতি করে বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি করতে পারে। তাই যাঁদের সন্তান হচ্ছে না ও সিমেন অ্যানালাইসিসে শুক্রাণুর সমস্যা আছে, তাঁদের ভেরিকোসিল আছে কি না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং এর চিকিৎসা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

চিকিৎসা

  • ওষুধের মাধ্যমে ভেরিকোসিলের ভালো চিকিৎসা নেই। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথার জন্য ওষুধ ও অণ্ডকোষের সাপোর্ট বা টাইট আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করলে সাময়িক আরাম পাবেন; কিন্তু পুরোপুরি রোগ নিরাময় হবে না।

  • অনেক ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরে অণ্ডকোষে ব্যথা থাকে। ব্যথার ওষুধ আর অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে অনেকে আশ্বাস পান যে এতেই ভালো হয়ে যাবেন। এমন রোগীর অনেকেরই কিন্তু ভেরিকোসিল আছে, যা ধরা পড়তে দেরি হয়। তাই ভেরিকোসিল সন্দেহ হলে বা অণ্ডকোষে ব্যথা হলে অভিজ্ঞ ইউরোলজিস্ট ও ইন্ডোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

  • ভেরিকোসিলের সঠিক ও সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো মাইক্রোসার্জিক্যাল ভেরিকোসিলেকটমি। এতে রোগটি ফিরে আসার আশঙ্কা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বা নেই বললেই চলে। এ পদ্ধতিতে সর্বাধুনিক মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে মাইক্রোসার্জিক্যাল সেন্টারে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের জন্য মাত্র এক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। দুই দিন পর থেকেই স্বাভাবিক কাজকর্ম করা সম্ভব। এ অস্ত্রোপচার অত্যন্ত নিরাপদ ও সবচেয়ে কার্যকর।

অধ্যাপক ডা. আজফার উদ্দীন শেখ: বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি ও ইন্ডোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ

আরও পড়ুন