গরমকালে ত্বকে কেন বয়েল ও কারবাংকল হয়

বয়েল ও কারবাংকল মূলত ত্বকের রোগছবি: সংগৃহীত

এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। কোনো দিন প্রচণ্ড গরম, তো আরেক দিন তীব্র বৃষ্টি। সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা। আবহাওয়ার এই চরম ভাবের কারণে ত্বকের ওপর প্রভাব পড়ে বেশ। এ সময় হতে পারে বিভিন্ন রকমের চর্মরোগ। এসবের মধ্যে অন্যতম বয়েল ও কারবাংকল।

বয়েল ও কারবাংকল কী

বয়েল ও কারবাংকল—এ দুটি শব্দের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত নই। এগুলো একধরনের ত্বকের রোগ। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে এগুলো হয়। স্ট্যাফাইলোকোক্কাস ব্যাকটেরিয়া মূলত এ জন্য দায়ী।

বয়েল বলতে ছোট ছোট ফোড়াকে বোঝায়, যেগুলো লোম বা চুলের ফলিকল থেকে উঠে আসে। এগুলো সাধারণত খুব ব্যথা করে। ভেতরে হলুদ বা সাদা পুঁজ থাকে। এর চারপাশের ত্বক লাল হয়ে যায় ও ফুলে থাকে। বেশির ভাগ সময় কয়েক দিন পর এগুলো নিজে নিজে ফেটে যায় বা শুকিয়ে যায়। অন্যদিকে কারবাংকলে বয়েলের মতো ছোট ছোট ফোড়া একসঙ্গে অনেকগুলো হয়, যা শরীরের তুলনামূলক প্রভাব ফেলে বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর হয়। অনেকের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়। পুঁজগুলো বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়।

আরও পড়ুন

গরমে কেন বেশি হয়

সাধারণত গরম আবহাওয়া ও আর্দ্রতা বেশি হলে বয়েল ও কারবাংকল বেশি হয়। এ ছাড়া এর পেছনে আরও কতগুলো কারণ আছে। যেমন:

১. অতিরিক্ত ঘাম

অতিরিক্ত ঘাম ত্বকের ছিদ্রপথকে আটকে দেয়। বিশেষ করে যেখানে চুলের ফলিকল থাকে, সেটির পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ রকম পরিবেশ ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধির জন্য সুবিধাজনক।

২. ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি

গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। এমন আবহাওয়ায় এ রকম ত্বকের রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি।

৩. চামড়ায় ঘর্ষণ ও অস্বস্তি

বেশি বেশি ঘাম হওয়ার কারণে বারবার ত্বকের সঙ্গে কাপড়ের ঘর্ষণ হয়, যা ত্বককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরে ওই জায়গা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢোকা সহজ হয়ে যায়।

৪. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা

অনেকে আছেন নিয়মিত গোসল করেন না বা ঘামে ভেজা কাপড় পরেই থাকেন। তাঁদের ত্বকে ধুলো ও ব্যাকটেরিয়া জমে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

করণীয়

আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কয়েকটি সাধারণ ব্যবস্থা নিলেই বয়েল ও কারবাংকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

  • নিয়মিত গোসল করে শরীর পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ছাড়া অ্যান্টিসেপটিক সাবান ব্যবহার করতে হবে।

  • পাতলা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। বেশি আঁটসাঁট কাপড় পরলে ঘাম জমে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

  • শরীরকে ঠান্ডা ও শুষ্ক রাখতে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

  • ছোটখাটো আঘাত বা ক্ষত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। তাহলে ব্যাকটেরিয়া জমার সুযোগ পাবে না।

  • ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র, যেমন রেজর, গামছা, তোয়ালে অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না।

  • রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

  • ডায়াবেটিক রোগীদের বয়েল ও কারবাংকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

এসব নিয়ম মেনে চললে খুব সহজে বয়েল ও কারবাংকলের মতো সাধারণ ত্বকের রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কারও বয়েল ও কারবাংকল হয়ে গেলে এবং শরীরের ওপর প্রভাব ফেললে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন