জিবে স্বাদ পাচ্ছি না, কিসের লক্ষণ

জ্বর হলে সবারই কমবেশি খাবারে অরুচি হয়
ছবি: পেক্সেলস

সাধারণত যেকোনো কারণে জ্বর হলে সবারই কমবেশি খাবারে অরুচি হয়। জিবের স্বাদ চলে যায়। কোভিড সংক্রমণের সময় এ সমস্যা আরও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছিল। তবে শুধু কোভিড নয়, যেকোনো ভাইরাসজনিত জ্বর, টাইফয়েড, প্রস্রাবে সংক্রমণ, ডেঙ্গু জ্বরেও স্বাদ চলে যেতে পারে। হেপাটাইটিস বা জন্ডিস হলে এটি প্রকটভাবে দেখা দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর বা সংক্রমণ সেরে গেলেই আবার ধীরে ধীরে রুচি ফিরে আসে। কারও কারও হয়তো রুচি ফিরে আসতে একটু দেরি হতে পারে। এ নিয়ে তাই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে যক্ষ্মার একটি অন্যতম উপসর্গ হলো অরুচি ও ওজন হ্রাস।

তাই কাশি, জ্বর, দীর্ঘ মেয়াদে অরুচি দেখা দিলে যক্ষ্মা পরীক্ষা করা উচিত।
তবে কেবল জ্বর বা সংক্রমণ নয়, অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অরুচি হওয়াটা খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। ডায়াবেটিসের রোগীদের মেটফরমিন বা জিএলপিওয়ান অ্যাগোনিস্ট-জাতীয় ওষুধে তীব্র অরুচি দেখা দিতে পারে। অনেক অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন মেট্রোনিডাজল, সেবনের সময় তীব্র অরুচি হয়। জিবের স্বাদ বদলে যায়। কেমোথেরাপির ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেক বেশি অরুচি হয়ে থাকে। কেমোর তৃতীয় থেকে পঞ্চম দিনে বেশি হয়।

নারীদের গর্ভাবস্থায় প্রথম দিকে, আবার কারও কারও পুরোটা সময়েই অরুচি ও বমি হয়। এটা অতিরিক্ত হলে তাকে বলে অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা।

রক্তস্বল্পতার কারণেও অরুচি হতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

রক্তস্বল্পতার জন্য অরুচি হতে পারে। মুখে ঘা হতে পারে। যার কারণে রুচি কমে যেতে পারে। হিমোগ্লোবিন, আয়রন প্রোফাইল করে এর চিকিৎসা করা হয়। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির হরমোন কর্টিসোল নিঃসরণ কমে গেলে অরুচি হতে পারে। সঙ্গে ওজন হ্রাস, মাথাঘোরা, লবণশূন্যতার মতো সমস্যা থাকে। কৃমি সংক্রমণের জন্যও অরুচি হয়। ছয় মাস পরপর এক সপ্তাহ অন্তর দুটি ডোজ খেতে হয় কৃমি চিকিৎসার জন্য। তবে বয়সভেদে মাত্রা ভিন্ন। আর অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কৃমির ওষুধ খাওয়া নিষেধ।

ক্রনিক কিডনি রোগ বা কিডনি ফেইলিউরের রোগীর রুচি কমে যায়। কিডনির কাজ হলো বর্জ্য নিষ্কাশন করা। এটি ঠিকমতো না হলে রক্তে বর্জ্য, বিশেষ করে ইউরিয়া জমে যায়, যার কারণে রুচি কমে যায়। একইভাবে লিবারের যেকোনো রোগ, জন্ডিস, সিরোসিস হলে অরুচি হবে। অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার, পাকস্থলী বা অন্ত্রের ক্যানসারে দীর্ঘ মেয়াদে অরুচির সঙ্গে ওজন হ্রাস হতে দেখা যায়।

অরুচি অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি এবং কারণ স্পষ্ট। এমনিতেই সেরে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অরুচি, সঙ্গে ওজন হ্রাস, রক্তস্বল্পতা, শরীরে পানি আসা, পেটে কোনো চাকা থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে লিভারের পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাফি, এন্ডোস্কপি বা কোলনস্কপি, পেটের সিটি স্ক্যান দরকার হতে পারে।

লেখক: ডা. রোজানা রউফ: অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড, পান্থপথ, ঢাকা

Photo by Liza Summer from pexels

photo by Andres Ayrton from pexels