পিরিয়ডের সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা হয়? এন্ডোমেট্রিওসিস নয় তো?
এন্ডোমেট্রিয়াম হলো জরায়ুর সবচেয়ে ভেতরের স্তর, যা প্রতি মাসে মাসিকের সময় রক্তের সঙ্গে বের হয়ে যায়। এই স্তর দুটি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের প্রতি সংবেদনশীল। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু জরায়ুর বাইরে ডিম্বনালি, ডিম্বাশয় বা অন্য কোনো জায়গায় থাকতে পারে। এ কারণে এন্ডোমেট্রিওসিসের সৃষ্টি হয়। ফলে মাসিকের সময় জরায়ুর সঙ্গে এসব জায়গায়ও রক্তপাত ও ব্যথা হয়। এটি খুবই কষ্টদায়ক অবস্থা।
উপসর্গ
● মাসিকের সময় পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। অনেকের সব সময় পেটে ব্যথা থাকে।
● যৌনমিলনের সময় ব্যথা।
● মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা দীর্ঘকালীন রক্তক্ষরণ।
● বন্ধ্যত্ব।
● মূত্র ও মলত্যাগের সময় ব্যথা অনুভব করা।
● দুর্বলতা, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, বিশেষত মাসিক চলার অবস্থায়।
কেন হয়
ডিম্বনালি, ডিম্বাশয় বা জরায়ুর অন্য কোনো স্থানে কীভাবে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু আসে?
● মাসিক চক্রের রক্ত যখন শরীরের বাইরে না বেরিয়ে ভেতরে প্রত্যাবর্তন করে এবং বিপরীত গতিতে ডিম্বনালি বা ডিম্বাশয়ে ফিরে আসে, তখন ডিম্বনালি বা ডিম্বাশয়ে এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ জন্মাতে শুরু করে।
● অস্ত্রোপচারের কারণে বিশেষ করে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবকালে অস্ত্রোপচার বা হিস্টারোস্কোপিতে এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ওই জায়গায় জন্মাতে পারে।
● কিছু রোগ প্রতিরোধ–সংক্রান্ত জটিলতা বা হরমোনগত কারণে পেরিটোনিয়াল কোষ এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুতে পরিবর্তিত হয়।
● এন্ডোমেট্রিয়াল কোষ অন্য কোনো অঙ্গে পৌঁছাতে পারে রক্ত বা লাসিকার মাধ্যমে।
● বয়ঃসন্ধিকালে ইস্ট্রোজেনের কারণে এন্ড্রাজোনিক কোষ এন্ড্রো এন্ডমেট্রিয়াল কোষে রূপান্তরিত হয়।
পরিবারে মা-বোনদের রোগটি থেকে থাকলে ৩০ বছর বয়সের পর যদি কোনো নারী তার প্রথম সন্তানের জন্ম দেন, জরায়ুতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা থাকলে, স্বাভাবিক সময়ের আগেই বারবার মাসিক শুরু হলে, মাসিক অনেক দিন ধরে চললে অথবা মাসিক চলার সময় অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হলে এর ঝুঁকি বাড়ে।
শনাক্ত
সম্পূর্ণ ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষা এন্ডোমেট্রিওসিস শনাক্তকরণে সাহায্য করে। যেমন আলট্রাসাউন্ড, এমআরআই ও বায়োপসি।
চিকিৎসা
● মাসিকের সময় ব্যথা কমানোর ওষুধ সেবন।
● হরমোন থেরাপি ব্যথা কমাতে, মাসিক নিয়মিত হওয়া ও মাসিকের রক্তপ্রবাহ কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। হরমোনের ওষুধগুলো এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যুর বৃদ্ধিকে বন্ধ করে দিতে পারে এবং নতুন এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ইমপ্ল্যান্ট গঠনে বাধা দিতে পারে।
●অস্ত্রোপচারেরদ্বারারূপান্তরিতএন্ডোমেট্রিয়ালটিস্যুবাদদেওয়াহয়।গুরুতরক্ষেত্রেজরায়ু, ডিম্বাশয়, ডিম্বনালিসহ (ফেলোপিয়ানটিউব) অস্ত্রোপচারকরেবাদদেওয়াহয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. আঞ্জুমান আরা বেগম, বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যা ও বন্ধ্যত্ব রোগ, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা