রক্তের কোলেস্টেরল অনেক কমে গেলে কি সমস্যা হয়

আমাদের চারপাশে অনেকেই নিয়মিত কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করেন। হার্ট অ্যাটাকের পর রক্তে চর্বির মাত্রা যা–ই থাকুক না কেন, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ নিয়মিত সেবন করতে হয়। যাঁদের হৃৎপিণ্ডের রক্তনালিতে ব্লক আছে, স্টেন্ট বা রিং বসানো হয়েছে কিংবা বাইপাস সার্জারি হয়েছে, তাঁদেরও সারা জীবন কোলেস্টেরলের ওষুধ খেতে হয়। আবার অনেকের হয়তো হৃদ্‌রোগ নেই, কিন্তু হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি আছে, যেমন ডায়াবেটিসের রোগী যাঁদের বয়স ৪০–এর বেশি, যাঁদের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, এসব ক্ষেত্রেও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমাতে এই ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধ নিয়মিত সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসাই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, রক্তে কোলেস্টেরল খুব কমে গেলে কি কোনো ক্ষতি হতে পারে? কোলেস্টেরল অনেক কমে যাওয়ার পরও কি ওষুধ চালিয়ে যেতে হবে?

রক্তের সব কোলেস্টেরল খারাপ নয়

রক্তের সব কোলেস্টেরল খারাপ নয়। রক্তে মূলত দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে। একটি হলো এলডিএল বা মন্দ কোলেস্টেরল, যা রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে ব্লক সৃষ্টি করতে পারে। অন্যটি হলো এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল, যা রক্ত থেকে খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণ করতে সাহায্য করে।

হৃদ্‌রোগীদের কোলেস্টেরল কত কম হওয়া বাঞ্ছনীয়?

যাঁদের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, হার্টে স্টেন্ট বা রিং বসানো হয়েছে, কিংবা বাইপাস সার্জারি হয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে রক্তের এলডিএল কোলেস্টেরল প্রতি ডেসিলিটারে ৫৫ মিলিগ্রাম বা এর কম রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি ৪০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত নামলেও চিন্তার কিছু নেই।

কোলেস্টেরল খুব কমে গেলে কি ওষুধ বন্ধ করতে হবে?

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর হলো—না। তবে যদি কোলেস্টেরল খুব কমে যাওয়ার সঙ্গে অস্বাভাবিক দুর্বলতা, পেশিতে তীব্র ব্যথা, মানসিক উদ্বেগ বা বিষণ্নতা কিংবা লিভারের এনজাইম বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করা যেতে পারে।

ওষুধ না খেলেও কি কারও কোলেস্টেরল খুব কম হতে পারে?

কিছু মানুষের জন্মগতভাবেই এলডিএল কোলেস্টেরল তুলনামূলক কম থাকতে পারে। এটি সাধারণত ক্ষতিকর নয় এবং এ জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। নতুন করে ওষুধ শুরু করলে বা ডোজ পরিবর্তনের পর: ৬-১২ সপ্তাহ পরে। মাত্রা স্থিতিশীল থাকলে: ৬-১২ মাসে একবার।

কোলেস্টেরল খুব কমে গেলে কি কোনো সমস্যা হতে পারে?

রক্তে কোলেস্টেরল খুব কম থাকলে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।

করণীয় কী?

নিজের সিদ্ধান্তে ওষুধ বন্ধ করা বা ডোজ কমাবেন না। নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর কোলেস্টেরল পরীক্ষা করান।

মনে রাখুন, হৃদ্‌রোগে রক্তের কোলেস্টেরল কম থাকা কোনো সমস্যা নয়, বরং এটি হৃদ্‌যন্ত্রের সুরক্ষা দেয়।

  • ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা