২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইউনাইটেড হাসপাতালের জেসিআই স্বীকৃতি অর্জন

ইউনাইটেড হাসপাতাল সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবার বৈশ্বিক মান জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) স্বীকৃতি অর্জন করেছে। জেসিআই স্বীকৃতিকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবার স্বর্ণমান হিসেবে ধরা হয়। যেসব হাসপাতাল রোগীদের জন্য উন্নত স্বাস্থসেবা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে, স্বীকৃতিটি তাদেরই দেওয়া হয়। মর্যাদাটি অর্জন করতে হাসপাতালকে হাজারেরও বেশি কঠোর মান বজায় রাখতে হয়। জেসিআই স্বীকৃতি একটি হাসপাতালের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার প্রতিফলন। আর এই অর্জন আরও গুরুত্ব বহন করছে; কারণ, প্রথমবারের মতো জেসিআই জরিপে অংশ নিয়ে নির্ধারিত ১ হাজার ২৭১টি মান ও মাপকাঠির প্রতিটিতে ইতিবাচক ফলাফল (জিরো নট মেট) অর্জন করেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল।

বাংলাদেশে প্রথম সারির স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউনাইটেড হাসপাতালের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রোগীর সুরক্ষা ও যত্নের গুণমান রক্ষা। জেসিআই স্বীকৃতি প্রমাণ করে ইউনাইটেড হাসপাতাল বিশ্বমানের স্বাস্থসেবা দিচ্ছে। তারা এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করছে, যা তাদের রোগী ও কর্মীদের জন্য ঝুঁকি কমিয়ে আনছে। জেসিআই স্বীকৃতি অর্জন করতে গিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল দেশের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের ধারায় অবদান ও পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত তারা স্থাপন করেছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের জেসিআই অর্জনের নেপথ্যের যাত্রা অনেক দিন ধরেই চলমান, যেটি এই হাসপাতালের ক্রমাগত উন্নতির সাক্ষী। হাসপাতালটি কৌশলগতভাবে অনেক উদ্যোগ নিয়েছে, যে কারণে সেবার মান আরও উন্নত, সম্প্রসারিত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। হাসপাতালটি সেবার মান উন্নীতকরণের প্রচেষ্টায় সেবার প্রতিটি ধাপে আমূল পরিবর্তন এনেছে।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হাসপাতাল প্রায় ছয় লাখ মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থসেবা দিয়েছে, আর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল প্রফেশনাল আর সেবাদাতার হাতেই নিশ্চিত হচ্ছে এই জেসিআই মানের স্বাস্থ্যসেবা।

ইউনাইটেড হাসপাতালের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের সব জায়গায় সর্বস্তরের মানুষের জন্য, তাদের সাধ্যের মধ্যে উন্নতমানের স্বাস্থসেবার ব্যবস্থা করা। সর্বোপরি দেশের চিকিৎসা খাতকে সমৃদ্ধ করা। যে কথা বারবার ব্যক্ত করেছেন ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈনউদ্দিন হাসান রশীদ ও ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান।

হাসপাতালে প্রবেশ থেকে শুরু করে চিকিৎসা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রোগীকে দেওয়া সেবাগুলোর টাইম ট্রাক নিশ্চিত করে রোগীর সঠিক চিকিৎসা। হাসপাতালে ভর্তির সময় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য ফল প্রিভেনশন ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়, সঙ্গে নিশ্চিত করা হয় রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সার্ভিস। হুইলচেয়ারে বসা রোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ প্রবেশ থেকে শুরু করে বাথরুমে হ্যান্ডেল, আছে হুইলচেয়ার নিয়ে প্রবেশ করার মতো বাথরুমও। ইউনাইটেড হাসপাতালে রোগীদের পড়ে যাওয়া ঠেকাতে ও প্রবেশের পর থেকে রোগীর যত্ন নিশ্চিত করতে রয়েছে দক্ষ নার্সিং ব্যবস্থা। তারা নিয়মিতভাবে রোগীর কক্ষ এবং বাথরুমের মেঝেতে লক্ষ্য রাখে, যাতে সেগুলো পরিষ্কার এবং শুকনা থাকে।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর একজন রোগী ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধায়নে থাকেন। আর জেসিআইয়ের নিয়ম আনুযায়ী ইমার্জেন্সিতে আসা রোগীর ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রাথমিক অ্যাসেসমেন্ট নিশ্চিত করা হয়। ইমার্জেন্সিতে রোগীর দ্রুত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চসংখ্যক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ উপস্থিত থাকেন। ইউনাইটেড হাসপাতাল সঠিক চিকিৎসা পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

হাসপাতালে ভর্তি প্রত্যেক রোগী দিনে সাতবার খাবার পেয়ে থাকেন। সঠিক চিকিৎসা প্রোটোকল নিশ্চিত করার জন্য একজন সার্টিফায়েড ডায়েটিশিয়ানের চার্ট অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত ও পরিবেশন করা হয়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের ডাক্তারের দেওয়া সব ব্যবস্থাপত্রে ওষুধের ব্র্যান্ডের নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম ব্যবহার করা হয়। হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ সরবরাহের সময় একজন ‘এ’ গ্রেড ফার্মাসিস্ট ওষুধের ডোজ, সুবিধা-অসুবিধা ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্মন্ধে অবগত করেন। ওষুধের গুণগতমান ও কার্যকারিতা বজায় রাখতে এই মডেল ফার্মেসিতে প্রতিটি ওষুধ কোল্ড চেইন মেনে সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। ওষুধের প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিটি স্তরে সঠিকভাবে এই চেইন মেনে চলা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে মান পরীক্ষাও করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম মানা হয়। এ ছাড়া ওষুধের আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত ধারা অনুযায়ী ডোজেজ লেবেলিং করা হয়, পাশাপাশি যেসব ডোজে উচ্চ সতর্কতা মানা জরুরি, সেগুলোতে বিশেষ লেবেলিং ট্যাগ লাগানো হয়। এখানে জরুরি ওষুধের শতভাগ সরবরাহ থাকে এবং ওষুধ সংরক্ষণের জন্য মানসম্পন্ন ফ্রিজের ব্যবস্থা রয়েছে।

ইউনাইটেড হাসপাতাল প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মেডিকেল রেকর্ড সংরক্ষণ করে। যদি কোনো রোগীর কাছ থেকে তথ্য হারিয়ে যায়, তিনি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ করার পর তাঁর মেডিকাল রেকর্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

ইউনাইটেড হাসপাতালে একটি সেন্ট্রাল স্টেরাইল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্ট (সিএসএসডি) রয়েছে, যা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় যাতে কোনো রকম সংক্রমণ না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখে ও রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই ইউনিট স্টেরিলাইজেশন ও হাসপাতালের সব জায়গায় যেকোনো সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিসপত্র ফেলে দেওয়ার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়মিত অডিট হয়ে থাকে।

কীভাবে একটি জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতাল অন্য যেকোনো হাসপাতালের তুলনায় সেবার মানের দিক থেকে অনেক এগিয়ে, চলুন সে সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে জেসিআই স্বীকৃত হাসপাতালের মাত্রাগুলো কী কী এবং আপনি কীভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনি সর্বোচ্চ সেবা পাবেন, সে সম্বন্ধে জানতে পারবেন। যে তথ্যগুলো আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, সেগুলো ছাড়াও এখানে আরও কিছু বিষয় রয়েছে, যেসব ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হাসপাতাল তাদের সেবার মান উন্নত করেছে:

ইউনাইটেড হাসপাতালের জেসিআই মান অনুযায়ী মৃত্যুর হার কমাতে ও রোগীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। ইউনাইটেড হাসপাতালে মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার শূন্য শতাংশ, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

একজন রোগীর হাসপাতালে অবস্থান একটি নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি হওয়া উচিত নয়। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী এটি পাঁচ দিন, তবে এটি প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ইউনাইটেড হাসপাতাল দ্রুত এবং কার্যকার চিকিৎসা নিশ্চিতের মাধ্যমে রোগীর সুবিধার্থে হাসপাতালে তাঁদের অবস্থানের সময় যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখার চেষ্টা করে।

জেসিআই মান অনুযায়ী প্রতিটি রোগীর আগমনের সময় থেকে খুব কম সময়ের মধ্যে (সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট) একজন নার্স এবং পরবর্তী সময়ে একজন ডাক্তারের দ্বারা রোগীর মূল্যায়ন খুব যত্নসহকারে করা উচিত। ইউনাইটেড হাসপাতাল ধারাবাহিকভাবে এই পদ্ধতি খুব কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে।

ইউনাইটেড হাসপাতালের সঠিক পোস্টসার্জিক্যাল চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য অর্জন করেছে। সঠিক, নির্ভুল ও সংক্রমণমুক্ত অস্ত্রোপচার নিশ্চিত করা হয়। প্রায় শতভাগ অস্ত্রোপচার সঠিক প্রস্তুতির সঙ্গে টাইম-আউট (ভুল সাইট, ভুল পদ্ধতি এবং ভুল ব্যক্তির অস্ত্রোপচার রোধে গৃহীত নিরাপত্তাব্যবস্থা) পদ্ধতি মেনে ও বৈশ্বিক মান অনুসরণ করে করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে রোগনির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড হাসপাতাল কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সঠিক রোগনির্ণয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার মান নিশ্চিতকরণের একটি চাবিকাঠি।

ইউনাইটেড হাসপাতালের আইএসও স্বীকৃত ল্যাবরেটরি রয়েছে, যেখান থেকে সার্বক্ষণিক সেবা পাওয়া যায়। ২০১৪ সাল থেকে টানা আইএসও স্বীকৃতি পেয়ে আসছে এই ল্যাব। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে একসঙ্গে ২২ জনকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা। জরুরি প্রয়োজনে এখানে মাত্র তিন ঘণ্টায় ব্লাড টেস্ট করা সম্ভব।

জেসিআই স্বীকৃতি ইউনাইটেড হাসপাতালে রোগীদের সেবাদানের জন্য উচ্চমান ও নিরাপদ যত্ন প্রদানে তাদের প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ। হাসপাতালটি ক্রমাগত সেবার মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। জেসিআই স্বীকৃতি তার কৃতিত্বের একটি স্মারক। স্বাস্থসেবার জন্য যেসব মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য বিকল্প হতে পারে ইউনাইটেড হাসপাতাল।