ঘন ঘন পানি খেলে কি ওজন কমে

পানি খাওয়ার সঙ্গে ওজন কমার সম্পর্ক নিয়ে চালু আছে বিভিন্ন তথ্য। কেউ কেউ বলেন, ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত ঘন ঘন পানি খেতে হবে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য পানির বিকল্প নেই। কিন্তু ওজন কমাতে পানি আদতে কতটা কার্যকর?

পানি খাওয়ার সঙ্গে ওজন কমার সম্পর্ক নিয়ে চালু আছে বিভিন্ন তথ্যছবি: প্রথম আলো

পানি ক্যালরি পোড়ায়

সম্প্রতি এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি ৫০০ মিলিলিটার পানি পানে বিশ্রামের সময়ও শরীরের ২৪ শতাংশ ক্যালরি পোড়ে। শুনতে অনেক বেশি মনে হলেও বাস্তবে ততটা বেশি নয়। বরং সেই ক্যালরি পোড়ানোর সময়কাল স্থায়ী হয় এক ঘণ্টা। কারও ওজন যদি ৭০ কেজি হয়, সে ক্ষেত্রে ৫০০ মিলিলিটার পানি খেলে তার মাত্র ২০ ক্যালরি পুড়বে। পানি পরিশোধন করে কিডনিতে পৌঁছে দিতে শরীরের যে শক্তি খরচ হয়, সে কাজেই ক্যালরি মূলত পোড়ে। ফলে ওজন কমানোতে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই বললেই চলে। প্রায় দুই লিটার পানি খেলে আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি পোড়াবেন, একটা বিস্কুটে তার চেয়ে বেশি ক্যালরি থাকে!

পানি খেলে খিদে কমে

এই দাবিও কাগজে–কলমে সত্য। অতিরিক্ত খিদে পেলে পানি খেয়ে খিদে মেটানোর অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। কিন্তু পানি খেলেই যে খিদে মিটে যায়, ব্যাপারটা তেমন নয়। বরং পানি পাকস্থলীর একটা বড় জায়গা দখল করে রাখে। এতে সাময়িক সময়ের জন্য খিদে কম লাগে। তাই বলে যে খিদে একেবারে দূর হয়, ব্যাপারটা তেমন নয়। খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেলে ওজনের ওপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে। ৩৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে, খাওয়ার আগে পানি পান তাঁদের ওজন কমাতে সাহায্য করেছে। দুই মাসের মধ্যে তাঁরা দুই কেজি ওজন কমিয়েছেন। একই পরীক্ষা তরুণদের (১৮-৩৫ বছর) ওপর চালানো হলেও তাতে কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। খাওয়ার আগে পানি খাওয়া ওজন কমানোর কোনো অব্যর্থ উপায় নয়। বয়সী ব্যক্তিদের বেলায় খাওয়ার আগে পানি পান খিদে কমিয়ে দেয়। এতে কম খাওয়া হয়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু তরুণদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজে দেয় না।

পানির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার উল্টে দিতে পারে পাশার দান
ছবি: প্রথম আলো

শুধু পানিই যথেষ্ট নয়

খিদে নিয়ন্ত্রণে কিংবা ওজন কমানোর জন্য শুধু পানি খাওয়া কখনোই কার্যকর কোনো উপায় নয়। খাবার যখন পাকস্থলীতে ঢোকে, তখন পেট থেকে একপ্রকার হরমোন নিঃসরিত হয়। যার মূল কাজ মস্তিষ্ককে জানান দেওয়া, পেট ভরে গেছে। পানি পান করে পাকস্থলী ভর্তি করে ফেললেও একই ঘটনা ঘটে। পাকস্থলী থেকে হরমোন সংকেত পাঠায়, পেট ভরে গেছে, খাওয়া থামাও। কিন্তু পানির সঙ্গে অন্যান্য খাদ্যের পার্থক্য হলো পানি যেমন খেতে সময় লাগে না, তেমনই পানি পাকস্থলী থেকে বের হতেও খুব বেশি একটা সময় লাগে না। ফলে সময়ের অনেক আগেই খিদে লাগতে শুরু করে। তবে এই পানির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার উল্টে দিতে পারে পাশার দান। বিশেষ করে আঁশসমৃদ্ধ খাবার নিয়মিতভাবে খেলে ওজন কমানো সম্ভব।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও হেলথলাইন