লৌহ বা আয়রন একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। মাতৃজরায়ুতে শিশুর বিকাশ, শিশুর প্রথম দুই বছরে দৈহিক ও মানসিক বিকাশ-বৃদ্ধি আয়রনের ঘাটতিজনিত সমস্যায় পড়ে বাধাগ্রস্ত হয়। বয়ঃসন্ধিকালের শিশু যদি আয়রনের ঘাটতিজনিত অসুখে ভোগে, তবে তার পড়াশোনা ও মেধাশক্তি–সামর্থ্য ক্ষুণ্ন হয়।
মাতৃজরায়ুতে গর্ভস্থ শিশু গর্ভফুলের মাধ্যমে আয়রন পেয়ে থাকে। তাই মায়ের পুষ্টিমান এখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই আয়রনের ৮০ শতাংশ গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে দরকার হয়।
সে কারণে যেসব নবজাতক পূর্ণ গর্ভকালের আগে ভূমিষ্ঠ হয়, তাদের মধ্যে আয়রন তুলনামূলক কম থাকে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এর প্রধান জোগানটা আসে তাকে দেওয়া খাদ্য-পুষ্টির মাধ্যমে। নবজাতকের আয়রনের উৎস মাতৃদুগ্ধ।
শিশুর আয়রনের দৈনিক চাহিদা
পূর্ণ গর্ভকাল পাওয়া নবজাতক শিশু: ১ মিলিগ্রাম/প্রতি কেজি ওজন
অকালজাত (প্রিম্যাচিউর) নবজাতক: ২ থেকে ৪ মিলিগ্রাম/প্রতি কেজি ওজন
১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশু: ৭ মিলিগ্রাম
৪ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশু: ১০ মিলিগ্রাম
৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু: ৮ মিলিগ্রাম
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী ছেলে: ১১ মিলিগ্রাম
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়ে: ১৫ মিলিগ্রাম
আয়রন–সমৃদ্ধ খাবার
হিম আয়রন–সমৃদ্ধ (প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত) খাবারের মধ্যে রয়েছে মাংস, পোলট্রিজাত খাবার, মাছ প্রভৃতি। নন-হিম আয়রন (উদ্ভিজ্জ খাদ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত) পাওয়া যায় পুঁইশাক, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি শাকসবজি, ফলমূল ও বিভিন্ন ধরনের শষ্যদানাতে। তবে শাকসবজি-ফলমূল থেকে রক্তে আয়রন শোষিত হওয়ার জন্য ভিটামিন সি–যুক্ত ফলমূল সঙ্গে খাওয়ানো উত্তম। যেমন কমলা, আঙুর, টমেটো। অন্যদিকে ফাইটেইটযুক্ত খাবার, যেমন ওটস, বার্লি, চা-কফি, কোকা, ক্যালসিয়াম ও সয়া প্রোটিন আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
শিশুর আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা দূর করতে
গর্ভবতী মায়ের আয়রন–সমৃদ্ধ শাকসবজি, ফলমূল ও আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণ।
দেরি করে নাড়ি কাটা-বাঁধার সাহায্যে নবজাতকের শরীরে আয়রন সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ানো।
৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো।
২ হাজার গ্রাম থেকে আড়াই হাজার গ্রাম ওজনের জন্ম নেওয়া শিশুকে ২–৬ সপ্তাহ বয়স থেকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ১ থেকে ২ মিলিগ্রাম/প্রতি কেজি ওজন হিসেবে আয়রন দেওয়া। একই সময়ে যেসব শিশুর ওজন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার গ্রামের মধ্যে, তাদের প্রতিদিন ২ মিলিগ্রাম/কেজি হিসেবে আয়রন এবং নবজাতক শিশু যাদের জন্ম ওজন দেড় হাজার গ্রামের কম, তাদের ২ সপ্তাহ বয়স থেকে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন দেওয়া।
প্রয়োজন অনুসারে পূর্ণ গর্ভকাল পাওয়া শুধু বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল শিশুকে ৪ মাস বয়স থেকে আয়রন দেওয়া।
শিশুর পরিপূরক ও শৈশবের খাবারদাবার প্রতিদিন যেন আয়রন–সমৃদ্ধ থাকে।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল