অনেকের ধারণা, রক্তদান করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে বা রক্ত কমে যায়। আসলেই কি রক্তদান করলে এমন কোনো সমস্যা হয়?
আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত রক্তকণিকা তৈরি হয়। নির্দিষ্ট সময় পর এসব রক্তকণিকার আয়ু শেষও হয়ে যায়। নতুন রক্তকণিকা এসে সেগুলোর জায়গা নেয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে ৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তদানের সময় সর্বোচ্চ ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত নেওয়া হয়। এই পরিমাণ রক্ত নিলে একজন সুস্থ মানুষের দেহে কোনো প্রভাব পড়ে না। কোনো সমস্যা ছাড়াই একজন মানুষ ১২০ দিন পরপর রক্ত দিতে পারেন। রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম ও স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি পরিমাণ পানি বা তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বিষয়গুলো মেনে চলাই যথেষ্ট। নিয়মিত রক্তদান করলে কোনো সমস্যা তো হয়ই না, বরং উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি কমে।
রক্তদানের আগে বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে কি?
১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো সুস্থ মানুষ নিয়মিত রক্ত দিতে পারেন। নারী রক্তদাতার ক্ষেত্রে ওজন হতে হয় অন্তত ৪৫ কেজি, পুরুষ রক্তদাতার ক্ষেত্রে ৫০ কেজি। সব রক্তদাতার ক্ষেত্রেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সংক্রমণ কিংবা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে তাঁর কাছ থেকে রক্ত নেওয়া হয় না। রক্তদাতার কোনো রোগ আছে কি না কিংবা তিনি কোনো ওষুধ খান কি না, তা–ও জেনে নেওয়া হয়। সব দিক ঠিক থাকলে কেবল তখনই রক্ত নেওয়া হয়। রক্তদানের জন্য মনের শক্তিটাই জরুরি। তবে রক্তদাতা চাইলে রক্তদানের আধা ঘণ্টা আগে আধা লিটার তরল খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
একজন নারী নিয়মিত রক্তদান করলে তাঁর কি বিশেষ কোনো সতর্কতা প্রয়োজন?
মাসিকের সময় রক্তক্ষরণের কারণে একজন নারীর রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি পুরুষের চেয়ে বেশি। মাসিকে রক্তক্ষরণ বেশি হলে বা আয়রনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকলে একজন নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগতে পারেন। নারী রক্তদাতার অবশ্যই এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত। তবে মাসিক স্বাভাবিক থাকলে ও পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত হলে একজন নারীও নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন।
কাদের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ?
নিরাপদ রক্তসঞ্চালনের জন্য কিছু পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া আবশ্যক। রক্তের মাধ্যমে ছড়ায়, এমন কোনো রোগ রক্তদাতা বহন করছেন কি না, স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে তা নিশ্চিত হতে হয়। আর রক্তদাতা ও গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের মিল ছাড়াও গ্রহীতার শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমাতে ক্রসম্যাচিং করে দেখা হয়। স্ক্রিনিং ও ক্রসম্যাচিং পরীক্ষায় সবকিছু ঠিক থাকলে তা গ্রহীতার জন্য নিরাপদ। তবে নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে মারাত্মক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যার নাম গ্রাফট-ভারসাস-হোস্ট ডিজিজ। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। তাই মা-বাবা, সন্তান, ভাই–বোন, আপন মামা-খালা-চাচা-ফুফু কারও রক্ত নেওয়া উচিত নয়।
রক্তদাতার সংকট কাটানোর উপায় কী?
আমাদের দেশে নানা ধরনের রোগীর জন্য রক্তের চাহিদা থাকলেও রক্তদাতার সংকট রয়েছে। তবে একজন রক্তদাতার রক্তের বিভিন্ন অংশ আলাদা করে যদি রোগীকে শুধু প্রয়োজনীয় অংশই দেওয়া হয়, তাহলে এক ব্যাগ রক্ত তিনজন রোগীর কাজে আসতে পারে। দেশে রক্তের বিভিন্ন অংশ আলাদা করার সুযোগ অপ্রতুল। সরকারি উদ্যোগে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রক্তের বিভিন্ন অংশ আলাদা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষিত লোকবলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে রক্তদান বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।