যখন স্নান করা মানা

আরেকজনের পরিচ্ছন্নতা ও মনের সতেজতার দিকে খেয়াল রাখতে হবেছবি: নকশা

টানা ১০টি দিন আমাকে স্নানহীন থাকতে হবে, জানার পর থেকেই কী যে অস্থির লাগছিল। হুট করে, বিনা নোটিশে, আপনার জীবনেও আসতে পারে এ রকম স্নানবিহীন সময়। আমার বেলায় কারণ ছিল অস্ত্রোপচার। কারও জন্য হতে পারে দুর্ঘটনার কারণে গায়ে লাগানো প্লাস্টার। ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার প্রভৃতি ভেজানো নিষেধ থাকে বলেই স্নানে এ ‘নিষেধাজ্ঞা’।

এ সময়ে রোগীর পুষ্টি, পথ্য প্রভৃতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও মনের সতেজতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যে অংশ ভেজানো নিষেধ, সেটুকু বাদ দিয়ে বাকি অংশের যত্নআত্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে পরামর্শ দিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসমাত লিমা।

পরিচ্ছন্নতা জরুরি

চুলে তেলের মালিশ নিন এ সময়
ছবি: নকশা

পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিন, প্রয়োজনে একাধিকবার। পোশাক বদলে দিন রোজ।

শরীর যাতে না ঘামে, সে ব্যবস্থাও করুন। প্রয়োজনে রোগীর ঘরে বাড়তি পাখার ব্যবস্থা রাখুন।

মাথায় কাটাছড়া না হয়ে থাকলে চুল ধুয়ে দিন। পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করে দ্রুত চুল শুকাতে সাহায্য করুন।

চুল আঁচড়ে পরিপাটি করে রাখুন।

রোগীকে শুইয়ে শরীর না ভিজিয়ে শ্যাম্পু করিয়ে দিতে পারেন।

শরীরের যেসব অংশে ঘাম বেশি হয়, সেসব অংশ সাবানের ফেনা দিয়ে পরিষ্কার করে দিন। পরে ভেজা কাপড়ের সাহায্যে সাবান তুলে ফেলতে হবে।

রোগী স্নানঘরে যেতে পারলে সেখানে প্লাস্টিকের চেয়ার বা টুল দিয়ে তাঁকে বসান। তাঁর শরীরের কিছু অংশে পানি ঢেলে দেওয়া যায়।

কেবল হাত বা পায়ের সমস্যা থাকলে সে অংশ না ভিজিয়ে (পলিথিন পেঁচিয়ে) হতে পারে স্নান।

চাই প্রফুল্লতা, চাই প্রশান্তি

ব্যথাবেদনার প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর রোগীর জীবনে স্বাভাবিক প্রফুল্লতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। মাথা ও হাত-পায়ের তালুর খানিক যত্নে শরীর-মন পেতে পারে প্রশান্তি। অবশ্য যদি এসব অংশ ভেজানোয় কোনো বিধিনিষেধ না থাকে।

যে রোগীকে শ্যাম্পু করানো সম্ভব, তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে মাথার ত্বকে উষ্ণ তেল মালিশ করে দিন। কপালের দুপাশ, কান ও ঘাড়ের পেছনের অংশ মালিশ করাটা জরুরি। শ্যাম্পু করানোর সুযোগ না থাকলে তেল ছাড়া খালি হাতেই দেওয়া যেতে পারে মালিশ।

শরীর মোছানো বা মুখ ধোয়ানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে দিন।

হাত ও পায়ের তালুতে সাবান আর ঠান্ডা পানি প্রয়োগ করুন।

গরম পানিতে শ্যাম্পু মিশিয়ে ব্রাশ দিয়ে রোগীর পায়ের পাতা ও গোড়ালি পরিষ্কার করে দিন। ধোয়ার পর উষ্ণ পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে পায়ে জড়িয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এ অবস্থায় পায়ের পাতা মালিশ করলে রোগী দারুণ প্রশান্তি পাবেন। এ জন্য পেশাদার কাউকে আনতে পারেন।

‘ঘর মন জানালা’

রোগীর ঘরে সজীবতা আনতে ফুলের ব্যবহার করতে পারেন
ছবি: নকশা

অসুস্থ অবস্থায় শরীর প্রতিদিনের ঝঞ্ঝাট থেকে বিশ্রাম পায়। এমন সময় এলে তাকে নেতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত নয়। সময়মতো খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ, প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন তো করতেই হবে। এতে শরীর হয়ে উঠবে সুস্থ, ত্বকও থাকবে সুন্দর। রোগীর ঘর শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখুন। রোদের বা চাঁদের আলো, মেঘের ছায়া যতটা দেখা যায়, যাক না খোলা জানালা দিয়ে। ঘরে সুগন্ধী ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোনো উপকরণে রোগীর অ্যালার্জি থাকলে সেটি ঘরে আনবেন না। রোগী চাইলে বই পড়ুক, পছন্দের অডিও শুনুক, চাইলে এক দিন মুখে একটু ম্যাসাজ ক্রিম প্রয়োগ করতে পারেন। ভেজা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ফেসপ্যাকও লাগাতে পারেন। কিছুটা সময়ের জন্য হলেও মন অন্য কিছু ঘিরে ব্যস্ত থাকবে। শরীর একটু একটু করে সুস্থ হয়ে ওঠার সময়ে নিজের এইটুকু যত্ন নিলে ক্ষতি কী, বলুন?