ভালো থাকুন
এই রোগ হলে কিডনি বিকলসহ যেসব প্রাণঘাতী সমস্যা দেখা দিতে পারে
আজ ১০ মে বিশ্ব লুপাস দিবস। লুপাস একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ। লুপাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন জ্ঞান নেই। এ জন্য সচেতনতা বাড়াতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে।
লুপাসের আরেক নাম সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রোমেটাসাস বা এসএলই। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যাতে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিজের ইমিউন সিস্টেম দ্বারা আক্রান্ত হয়। এর ফলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা তেমন গুরুতর নয়। যেমন ত্বকে লাল লাল চাকা, মুখে প্রজাপতির মতো র্যাশ বা গিরাব্যথা। এই রোগে কিছু প্রাণঘাতী সমস্যাও দেখা দিতে পারে যেমন কিডনির অকার্যকারিকতা, হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্কের সমস্যা ইত্যাদি। এর মধ্যে লুপাস নেফ্রাইটিস বা লুপাসজনিত কিডনির সমস্যা সবচেয়ে গুরুতর জটিলতাগুলোর একটি।
প্রায় ৫০ শতাংশ লুপাস রোগীর কিডনি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাঁদের ৩০ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা দেয় কিডনির অকার্যকারিতা। এ ছাড়া ১০ শতাংশের কিডনি একেবারে ‘এন্ড স্টেজ ফেইলিউর’–এ চলে যেতে পারে।
এসএলইর কারণে যে কিডনি সমস্যা হয়, তা একধরনের প্রদাহ মানে লুপাস নেফ্রাইটিস। সাধারণত এসএলই রোগ শনাক্ত হওয়ার প্রথম ৬ থেকে ৩৬ মাসের মধ্যে বেশির ভাগ কিডনি আক্রান্ত হয়। তবে যেকোনো সময় এটা হতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন, কিডনি আক্রান্ত হচ্ছে
কিছু লক্ষণ দেখা দিলে এসএলই রোগীদের কিডনিও আক্রান্ত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। যেমন চোখের নিচ ও চারপাশ ফোলা, পা ফোলা বা পায়ে পানি আসা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া, প্রস্রাবে ফেনা দেখা দেওয়া বা হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।
পাশাপাশি লুপাসের অন্যান্য লক্ষণ যেমন ত্বকে র্যাশ, মুখের ভেতর ঘা, ঠান্ডা লাগলে হাতের রং পরিবর্তন ইত্যাদি যদি থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ বাতরোগ বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।
কী করবেন
উল্লিখিত উপসর্গগুলো দেখা দিলে ও সন্দেহ হলে প্রস্রাব পরীক্ষা করে প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ দেখা হয়। এর সঙ্গে রক্তকণিকা ও সেলুলার কাস্ট পাওয়া যায়। ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া মানে কিডনি কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অ্যান্টিডিএস–ডিএনএ, কমপ্লিমেন্ট থ্রি ও ফোরের মাত্রা দেখা হয়। তবে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথলজি করে প্রদাহের মাত্রা ও তীব্রতা নির্ধারণ করা হয়। সঠিক চিকিৎসার জন্য বায়োপসি একটি আবশ্যক পরীক্ষা।
চিকিৎসা কী
লুপাস নেফ্রাইটিসের চিকিৎসাপদ্ধতি জটিল। স্টেরয়েড ও ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক চিকিৎসা দিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা