সচেতনতাই এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ থেকে রক্ষা করবে

এসকেএফ ও এন্ডোমেট্রিওসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত অনলাইন বৈঠকে বক্তারা তুলে ধরলেন সচেতনতার কথা

এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ নারীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে ফেলে। রোগটি থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না। তাই এ রোগকে নীরব ঘাতক ব্যাধি বলা যায়। তবে ভয় পেলে চলবে না। প্রথমেই আমাদের সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে হবে। সচেতনতাই এন্ডোমেট্রিওসিস থেকে নিজেকে রক্ষা করার অন্যতম উপায়।

নারীদের মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এবং এন্ডোমেট্রিওসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনলাইন বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘এন্ডোমেট্রিওসিস নির্ণয়: আর দেরি নয়’ স্লোগান নিয়ে চলছে এন্ডোমেট্রিওসিস সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে গত রোববার অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ এই অনলাইন বৈঠক।

রোববার অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ এই অনলাইন বৈঠক

এন্ডোমেট্রিওসিস অ্যাডিনোমায়োসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ইএএসবি) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সালেহা বেগম চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মানুষ এন্ডোমেট্রিওসিস রোগে আক্রান্ত। এ রোগের প্রধান উপসর্গ ব্যথা ও বন্ধ্যাত্ব। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা হলে এ রোগ ঠেকানো যায়, এর বৃদ্ধি রোধ করা যায়। যাঁরা এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগছেন, মার্চে হলুদ শাড়ি পরে আমরা তাঁদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। এ ছাড়া এ মাসে আমাদের আরও অনেক কার্যক্রম থাকে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন ইএএসবির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী। তিনি বলেন, এন্ডোমেট্রিওসিস রোগীর রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা করতেই অনেক সময় লেগে যায়। যখন রোগ নির্ণয় করা হয়, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। রোগ নির্ণয় করতে সবার আগে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে।

ইএএসবির জাতীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি বেগম আলোচনায় বলেন, বিভিন্ন কারণে মেয়েদের এন্ডোমেট্রিওসিস রোগ হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনই মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। কোনো কিছুতেই তাঁরা আগ্রহ পান না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইএসবির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. রওশন আরা বেগম বলেন, ‘একজন নারীর বিভিন্ন বয়সে এ রোগ হতে পারে। অধিকাংশ নারীই রোগটির কথা গোপন রাখে। বিশেষ করে অল্প বয়সীরা এ রোগ হলে কাউকে বলতে চায় না। আমাদের সমাজে দেখা যায়, যখন একজন কিশোরীর প্রথম প্রচণ্ড পেটব্যথা হয়, মাসিক শুরু হয়, তখন দ্বিধা-সংকোচ-ভয়ের কারণে সে কাউকে কিছু বলতে পারে না। এ সংকোচ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোনো সমস্যা হলে বিশেষজ্ঞদের বলতে হবে। কারণ এ রোগ ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অঙ্গনের বিশেষজ্ঞরা

ইএএসবির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. ফারহানা দেওয়ান বলেন, ‘সবার আগে এ রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। এ রোগ হলে অনেক ব্যথা হয়। তাই প্রথমেই ব্যথা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। এ জন্য কিছু উপায় আছে। এন্ডোমেট্রিওসিস প্রতিরোধ করতে হলে ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। ভিটামিন এ, বি, সি-যুক্ত খাবার এ রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি, মাঝারি সাইজের একটা করে কাঁচা ফল ইত্যাদি খেতে হবে। এ ছাড়া খেজুরজাতীয় শুকনা ফল খাওয়া যায় পরিমাণমতো। পানি বেশি করে পান করা উচিত। প্রতিদিন শারীরিক ব্যায়ামও করা দরকার।’

ইএএসবির আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইএএসবির জাতীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. কোহিনূর, জাতীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. লায়লা আর্জুমান্দ বানু, সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. পারভীন ফাতেমা, এডিটর অধ্যাপক ডা. গুলশান আরা ও অধ্যাপক ফাতেমা রহমান।

অনুষ্ঠানে শুরুতেই আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার ডা. মো মুরাদ হোসেন। এ অনুষ্ঠানের সায়েন্টিফিক পার্টনার ছিল এসকেএফের অস্টক্যাল জি এক্স ব্র্যান্ড, যা দেশের সবচেয়ে ছোট আকারের কোরাল ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–সংবলিত ট্যাবলেট। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয় প্রথম আলো এবং এসকেএফের ফেসবুক পেজে।