যে রোগে হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যায়

ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি (ডিসিএম) হার্টের (হৃৎপিণ্ড) মাংসপেশির রোগ। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের দেয়াল পাতলা হয়ে যায় ও এর বাঁ দিকের চেম্বার অস্বাভাবিক রকম বড় আকার ধারণ করে বা ফুলে যায়। ফলে হৃৎপিণ্ডের পাম্পিং ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। হৃদপিণ্ড এর নিজস্ব গতিতে পাম্প করতে না পারায় রোগীর শরীরে, বিশেষ করে পায়ে পানি আসে ও অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়।

উপসর্গ

কোনো উপসর্গ না থাকায় রোগী বুঝতে পারেন না যে তাঁর হৃৎপিণ্ডে ডিসিএম আছে। চিকিৎসা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তি হৃৎপিণ্ড অকার্যকর হওয়া থেকে মৃত্যুঝুঁকিতে পড়তে পারেন। উপসর্গগুলোর মধ্যে শুরুর দিকে অতিমাত্রায় দুর্বলতা, স্বাভাবিক কাজকর্মে শ্বাসকষ্ট, পায়ের পাতায় ও গোড়ালিতে পানি আসে এবং বুকব্যথা ও বুক ধড়ফড় করতে থাকে। পরিবারে কারও এ রোগ হলে বাকি সবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উত্তম।

কারণ

ডিসিএমের কারণ হিসেবে কিছু সুনির্দিষ্ট সংক্রমণ, প্রেগন্যান্সির শেষের দিকের জটিলতা, ডায়াবেটিস, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশিতে আয়রন জমা হওয়া (হিমাক্রমাটোসিস), উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হৃৎপিণ্ডের আ্যরিদমিয়া ও ভালভ ঠিকভাবে বন্ধ না হওয়াকে দায়ী করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া অতিমাত্রায় মদ্যপান, সিসা, কোবাল্ট, পারদজাতীয় টক্সিনের সংস্পর্শে আসা, ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে এ রোগ হতে পারে।

ডিসিএমে যা হয়

ডিসিএমের কারণে হৃৎপিণ্ডের চেম্বার, বিশেষ করে বাঁ দিকের ভেন্ট্রিকল বড় হয়ে যাওয়ায় ভালভ বন্ধ হওয়ার অ্যালাইনমেন্ট বদলে যায়। ফলে রক্তপ্রবাহের কিছু অংশ ব্যাক ফ্লো করে ও হৃৎপিণ্ডকে আরও বড় হতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড বড় হতে হতে একসময় পাম্প করতে ব্যর্থ হয়ে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়ায় এটি তার পাম্প করার ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং এর ফলে অনিয়মিত হার্টবিট তথা অ্যারিদমিয়া দেখা দেয়।

চিকিৎসা

জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন আনাসহ বিটাব্লকার, এসিই ইনহিবিটার, ডাইইউরেটিকস–জাতীয় ওষুধ দিয়ে হৃৎপিণ্ড অকার্যকর হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা করতে হবে। হৃৎপিণ্ডের ছন্দপতনের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি–অ্যারিদমিক ওষুধ লাগবে। হৃৎপিণ্ডের চেম্বারে ক্লট বা জমাট রক্ত ধরা পড়লে রক্ত পাতলা করার ওষুধ দরকার হবে।

ডা. মুহম্মদ আশিকুর রহমান, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, কার্ডিওলজিস্ট, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা