প্রথম আলো: মুখ ও মুখগহ্বরের যত্ন না নিলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
অধ্যাপক মতিউর রহমান মোল্লা: সুস্থ মুখগহ্বর সুস্থ শরীরের অংশ। মুখগহ্বরের নিয়মিত যত্ন নেওয়া না হলে দাঁতে পাথর জমা, মাড়ির প্রদাহ, দাঁত ক্ষয়, পেরিওডন্টাইটিস, অতিরিক্ত পাথর জমে দাঁত নড়ে যাওয়া, মুখের ক্যানসার, দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সুস্থ দাঁত ও মাড়ি থাকলে সুন্দর করে এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাসা সম্ভব। আর মুখে দুর্গন্ধ থাকলে নিজে বুঝতে না পারলেও পাশের ব্যক্তি তাতে খুবই বিরক্ত হন। এতে ব্যক্তিগত ও সামাজিক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটে। ব্যক্তির মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়।
শুধু তা–ই নয়, মুখগহ্বরের হাইজিনের বিষয়টি বিভিন্ন রোগের সঙ্গেও সম্পর্কিত। হৃদ্রোগের সঙ্গে দাঁতের মাড়ির রোগের সম্পর্ক আছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীদের প্রায় সময়ই মাড়ির রোগ দেখা দেয়। মুখগহ্বর পরিষ্কার না থাকলে এখানে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, চোখে কোনো সংক্রমণ থাকলে তা আরও বাড়িয়ে দেয়। মাড়ির সংক্রমণ থেকে কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দাঁত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা কতটুকু মানুষের হাতের নাগালে আছে?
মতিউর রহমান মোল্লা: ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দাঁত ও মুখের বিভিন্ন সমস্যায় বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাচ্ছে না তা বলা যায়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় ঢাকা শহরের ৫০ শতাংশ ক্লিনিক যন্ত্রপাতির জীবাণুমুক্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ের হাইজিন মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছে। ওরাল ক্যানসার সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ খাতের সার্বিক মান উন্নয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাত পাওয়াসহ সংশ্লিষ্ট রোগীরা দেশেই উন্নত মানের সেবা পাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরাও রোগীর সমস্যা বুঝতে পারেন না—নাক, কান, গলাসহ বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে ঘুরে রোগীদের সঠিক জায়গায় আসতে হচ্ছে।
মুখের ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিলতা থেকে বাঁচতে হলে করণীয় সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
মতিউর রহমান মোল্লা: শিশুদের দুধদাঁতসহ বয়স্কদের দাঁত, মাড়ির আক্কেলদাঁত—কোনো দাঁতকেই অবহেলা করা যাবে না। দাঁতসহ মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য রক্ষায় প্রথমত মানুষকে সচেতন এবং স্বাস্থ্য রক্ষা করাটা কেন জরুরি, তা বুঝতে হবে। সিগারেটের প্যাকেটে ভয়াবহ ছবি দেওয়া থাকে, ধূমপান করলে কী হবে সেই বার্তাও থাকে। কিন্তু মানুষ পাত্তা দেয় না। শুধু ভয় না দেখিয়ে ধূমপানের পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। একটা সময় নারীদের মাসিক নিয়ে কেউ কথা বলতে চাইত না। এখন গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার ফলে মাসিকের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অনেকেই আর লজ্জা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ের সমস্যাগুলোর সমাধান সহজ হচ্ছে। একইভাবে ধূমপান, পান, জর্দা, সুপারি, সাদাপাতা, গুল ইত্যাদি বাজে অভ্যাস নিয়ে আলোচনা করতে হবে। পাঠ্যবইতে এগুলো ব্যবহারের ভয়াবহ দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। আর একই সঙ্গে সরকার যদি তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তাহলে মানুষ ক্যানসারসহ অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই পাবে।
প্রথম আলো: অনেকের মধ্যে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করার ক্ষেত্রেও অবহেলা দেখা যায়।
মতিউর রহমান মোল্লা: দাঁত নিয়ে মানুষ যদি খুব বেশি অবহেলা না করে, ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দাঁতের সমস্যার সমাধান করে দাঁত রক্ষা করা সম্ভব। ভেজাল খাবার থেকেও মুখের ভেতরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই ভেজাল খাওয়া চলবে না। ভিটামিন এ, বি এবং ই–এর অভাবে মুখের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। খাদ্যতালিকায় পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে। ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, ভাঙা দাঁত, মাড়ির পাথরসহ কোনো সমস্যাকেই অবহেলা করা যাবে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে কম করে হলেও দিনে তিনবার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এটি করতে হবে সকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় খাওয়ার পরে। শুধু দাঁত নয়, জিব, গাল ও তালু একইভাবে পরিষ্কার করতে হবে। কর্মজীবী নারীদের অনেকেই ব্যাগে লিপস্টিক রাখেন, একইভাবে ব্রাশ আর টুথপেস্ট রাখতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে ব্রাশ ও টুথপেস্ট রেখে দিলে খাওয়ার পর চট করে ব্রাশ করে ফেলা সম্ভব। বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানির ব্রাশ ও পেস্ট সহজলভ্য হওয়ায় মুখের সমস্যাগুলো কমছে। এখন শুধু নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।