জিবিএসে ফিজিওথেরাপি

গুলেন–বারি সিনড্রোম বা জিবিএস একটি ইমিউন প্রতিক্রিয়াজনিত রোগ। ‘ক্যামপাইলো ব্যাকটার জিজুনি’ নামের একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কিছু দিন পরে জিবিএস দেখা দেয় বলে মনে করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সাধারণত ডায়রিয়া বা অন্ত্রের সংক্রমণ হয়ে থাকে। সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পর কারও কারও জিবিএস দেখা দেয়। ব্যাকটেরিয়ার বিপরীতে তৈরি অ্যান্টিবডি স্নায়ুকোষকে আঘাত করলে এ রোগ দেখা দেয়। জিবিএস নারী–পুরুষ উভয়েরই হতে পারে; হতে পারে যেকোনো বয়সী মানুষের।

কীভাবে বুঝবেন

● কয়েক দিন ধরে পাতলা পায়খানা আর জ্বর। এর কয়েক সপ্তাহ পর হাত–পায়ে অবশ ভাব বা শক্তিহীনতা বোধ করেন রোগী।

● পায়ের পাতা থেকে শুরু করে ওপরের দিকে ক্রমে হাত ও পায়ের শক্তি কমে যায়, এমনকি হাত–পা নাড়ানোর ক্ষমতা থাকে না। পেশিগুলো অবশ হতে থাকে।

● কিছু ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি মাংসপেশি প্যারালাইজড হয়ে গেলে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় এবং রেসপিরেটরি ফেইলিউর হয়ে শতকরা পাঁচ থেকে ছয়জন রোগী প্রাণ হারান।

করণীয়

● রোগীর অবস্থা যখন সংকটাপন্ন, অর্থাৎ রোগী হাত-পা নাড়াতে পারছেন না, তখন তাঁকে হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করা উচিত। কারণ, শ্বাস নেওয়ার পেশিগুলো আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হলে রেসপিরেটরি সাপোর্ট লাগতে পারে। রোগীর অবস্থা অনুযায়ী নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা দেন।

● সাধারণত উপসর্গ দেখে এবং স্পাইনাল কর্ড থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করে রোগ নিশ্চিত করা হয়। স্টেরয়েড, ইমিউনোগ্লোবিউলিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে।

কখন ফিজিওথেরাপি

● প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার পর ধীরে ধীরে রোগীর পেশিতে শক্তি ফিরে আসতে শুরু করে। এ সময় সঠিক ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসা জরুরি এবং এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারেন একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ।

● আক্রান্ত ব্যক্তির সেরে উঠতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। সংকট কেটে যাওয়ার পর রোগীকে হাত–পায়ের শক্তি বাড়ানো ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ওষুধের পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

● এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে রেখে দিনে তিন থেকে চারবার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিতে হয়, বিশেষ করে হাত–পায়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য ইলেকট্রিক্যাল সিমুলেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ, ব্যালান্স ট্রেনিং, গ্রেইট ট্রেনিং ইত্যাদি চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে ক্রমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
আগামীকাল পড়ুন: ডাইলেটেড কার্ডিওমায়োপ্যাথি কী