ক্যানসার ঠেকানোর সর্বোত্তম পন্থা

আজ ৪ ফেব্রুয়ারি অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব ক্যানসার দিবস। ক্যানসার বর্তমানে একটি প্রধান বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে সীমিত স্বাস্থ্যসেবা, সচেতনতার অভাব ও দেরিতে রোগনির্ণয় উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ। অনেকেই জানতে চান, কী করলে বা কীভাবে জীবন যাপন করলে ক্যানসার থেকে মুক্ত থাকা যায়। উত্তর হলো, ক্যানসারের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে জানা ও এ বিষয়ে সচেতনতাই হচ্ছে সেরা প্রতিরক্ষা।

দেশে স্তন, মুখগহ্বর, জিব, খাদ্যনালি, কোলোরেক্টাল, জরায়ুমুখ ও ফুসফুসের ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হয়।

৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ক্যানসার স্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়মিত স্ক্রিনিং ও এর মাধ্যমে প্রারম্ভিক শনাক্তকরণ জীবন বাঁচায়। দেশে স্তন, মুখগহ্বর, জিব, খাদ্যনালি, কোলোরেক্টাল, জরায়ুমুখ ও ফুসফুসের ক্যানসার সবচেয়ে বেশি হয়। আসুন জেনে নিই কীভাবে ক্যানসার থেকে নিরাপদ থাকা যায়:

  • অস্বাস্থ্যকর ও ট্রান্সফ্যাটযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার বা ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা এবং পর্যাপ্ত তাজা শাকসবজি–ফলমূল খাওয়ার মাধ্যমে কোলন ও ব্রেস্ট ক্যানসারের মতো অনেক ক্যানসারই প্রতিরোধ করা যায়। নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও সঠিক ওজন বজায় রাখাও জরুরি।

  • ধূমপান ফুসফুসসহ মুখগহ্বর ও অন্যান্য ক্যানসারের জন্য সরাসরি দায়ী। শুধু সিগারেট নয়; জর্দা, গুল ইত্যাদি যেকোনো ধরনের তামাকই ক্যানসার সৃষ্টিকারী। পানে জর্দা ও গুলের ব্যবহারের কারণে দেশে নারীদের মধ্যে মুখগহ্বরে ক্যানসারের হার অনেক বেশি।

  • অল্প বয়সে বিয়ে, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যৌনজীবন, অনিরাপদ সহবাস ইত্যাদি জরায়ুমুখ, যকৃতের ক্যানসার প্রভৃতির জন্য দায়ী।

  • ঠিক সময়ে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে জরায়ুমুখ, যকৃতের ক্যানসার ইত্যাদি প্রতিরোধ সম্ভব। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের টিকা লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়।

  • কলকারখানা ও বায়ুর দূষণ কমাতে পারলে ক্যানসার অনেকটাই কমানো সম্ভব। কারখানার কর্মীদের জন্য যথার্থ সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করতে হবে। রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা, অকারণে নানা রকম ওষুধ ও রাসায়নিকের ব্যবহার, এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনও ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ, বনাজি সেবন এবং অকারণে টেস্ট করাবেন না।

  • ক্যানসারের কোনো উপসর্গ না থাকলেও তা প্রতিরোধে নিয়মিত পরীক্ষা–নিরীক্ষার নাম হলো স্ক্রিনিং। বিশেষ করে পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি হলে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আসা প্রয়োজন, যেমন ব্রেস্ট ক্যানসারের জন্য ব্রেস্টের আলট্রাসাউন্ড, ম্যামোগ্রাফি; জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য প্যাপস স্মিয়ার বা ভায়া টেস্ট, বৃহদন্ত্রের ক্যানসারের জন্য কোলনস্কপি ইত্যাদি।

  • যেকোনো উপসর্গকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত হয় এবং দ্রুত চিকিৎসার আওতায় এলে সেরে ওঠার সম্ভাবনা বাড়ে। ওজন হ্রাস, অরুচি, দীর্ঘমেয়াদি কাশি ও জ্বর, শরীরে কোনো পিণ্ড বা গোটা, গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া, মুখে ঘা, কাশি বা মলের সঙ্গে রক্ত, মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত বা মেনোপজের পর রক্তপাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত পরামর্শ নিতে হবে। ক্যানসার হলেই মৃত্যু অনিবার্য, তা নয়। সচেতনতা, সঠিক সময়ে শনাক্তকরণ ও দ্রুত চিকিৎসা অনেক ক্যানসারই সারিয়ে তুলতে পারে।

  • অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ইমেরিটাস অধ্যাপক, মেডিসিন