পিসিওএসের রোগীর খাদ্যাভ্যাস 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা সংক্ষেপে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। জীবনযাত্রার সঠিক মান, সুষম খাবার গ্রহণ ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেসব নারী প্রয়োজনের অতিরিক্ত ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করেন এবং কম শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের মধ্যে পিসিওএস দেখা দেওয়ার প্রবণতা বেশি। উচ্চতা অনুপাতে আদর্শ ওজন বজায় রাখার মাধ্যমে বেশির ভাগ পিসিওএস সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য খাবারের ক্যালরি হ্রাসের চেয়ে কর্মঠ জীবনযাপন ও পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা বেশি জরুরি ও কার্যকর। শরীরের চাহিদার তুলনায় অনেক কম খেয়ে ওজন কমাতে গেলে শরীর অনুপুষ্টির অভাবে ভুগতে পারে। তাই প্রতিদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করা উচিত। একবারে একটানা এক থেকে দেড় ঘণ্টা ব্যায়াম করা সম্ভব না হলে দিনে দুবার ব্যায়াম করা যেতে পারে।

বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাবারকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। সহজ শর্করা ও চিনিযুক্ত সাদা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। জটিল শর্করাযুক্ত খাবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সধারী খাবার, যেমন লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, বিভিন্ন রঙের শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, ওলকপি, কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেঁপে, শসা, উচ্ছে, করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, পটোল, চালকুমড়া, ডাঁটা, ধুন্দুল ইত্যাদি খেতে হবে।

প্রচুর তাজা ফলমূল, যেমন জাম, লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, কামরাঙা, জামরুল, আমলকী ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এসব শাকসবজি ও ফলমূল উচ্চ খাদ্য আঁশযুক্ত এবং এতে আছে অধিক অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, লাল চিড়া, ডাল, বাদাম, মটরশুঁটি, মিষ্টি আলু, গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শিম, পালংশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাক, কমলা, বাতাবিলেবু, মাল্টা, কলা, তরমুজ, টমেটো, মাংস, ডিম, দুধ, দই, পনির, মাশরুম, চিংড়ি ইত্যাদি) এবং ভিটামিন ডি (তৈলাক্ত মাছ, কলিজা, ডিমের কুসুম, মাখন, উন্নত প্রজাতির মাশরুম প্রভৃতি) উপকারী। রোজ শরীরে রোদ লাগানো জরুরি।

শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও কোষপ্রাচীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পরিমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার, যেমন চর্বিযুক্ত মাছ, বাদাম, বিভিন্ন তেলবীজ, চামড়া বাদে মুরগির মাংস ইত্যাদি খেতে হবে। একবারে বেশি পরিমাণে না খেয়ে অল্প অল্প করে দিনে চার থেকে পাঁচবার খাবার খাওয়া ভালো।

দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে ও পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয় এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত গরু ও খাসির মাংস, মুরগির চামড়া, গিলা, কলিজা, মাথা, গরু ও খাসির ভুঁড়ি, ফুসফুস, কলিজা, জিব, মগজ ইত্যাদি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

পুষ্টিবিদ, ঝিনাইদহ ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ঝিনাইদহ