শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য কী করবেন, কী করবেন না

শিশুর প্রথম পাঁচ বছরেই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে নজর দেওয়া উচিতছবি: কবির হোসেন

শিশুর শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে তার বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের দিকে নজর দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। ধারালো স্মৃতিশক্তি শিশুর বিকাশের অন্যতম শর্ত। তবে বেশির ভাগ মা-বাবাই শিশুর স্মৃতিশক্তির ব্যাপারটা খেয়াল করেন সন্তান যখন স্কুলে যেতে শুরু করে, সে সময়। যদিও স্কুলের পড়া মনে না রাখার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে শিশুর অতিচঞ্চলতা, অমনোযোগিতা, শারীরিক অসুস্থতা, পরিবেশগত সমস্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান পদ্ধতিসহ অনেক কিছুর জন্যই।

শিশুর জন্মের পর প্রথম পাঁচ বছরেই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে নজর দেওয়া উচিত। এ সময় তার মস্তিষ্কের ধারণক্ষমতাও বেশি থাকে। শিশুর স্মৃতিশক্তি ধারালো করতে বেশ কিছু কাজ অনুসরণ করা যায়, কিছু কাজ পরিহারও করা ভালো।

কী করতে পারেন

  • খেলার মাধ্যমে শেখানোর চেষ্টা করলে শিশুর মনে রাখতে সুবিধা হয়। এ ধরনের খেলা একা খেলা যায়, বন্ধুর সঙ্গে খেলা যায়, বাসায় সবার সঙ্গেও খেলা যায়। খেলতে খেলতে শেখার স্থায়িত্ব বেশি হয়। হতে পারে সেটা মেমোরি গেম, শব্দজট, শব্দ তৈরি কিংবা ধাঁধা।

  • শিশুর কল্পনাশক্তি বাড়াতে উৎসাহিত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে শিশুকে কিছু বলার বা পড়ানোর পর বলতে হবে যে তুমি এটা মনে মনে দেখার চেষ্টা করো এবং কী দেখলে, তা বর্ণনা করো।

  • অন্যকে শেখানোর ব্যাপারেও শিশুকে উৎসাহিত করতে হবে। হয়তো তাকে একটা ফুল আঁকা শেখানো হয়েছে, এবার তাকে সুযোগ দিতে হবে কীভাবে এই ফুল আঁকতে হয়, সেটা বাড়ির কাউকে শেখাতে। এভাবেও তার একই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি তীক্ষ্ণ হয়, অন্যদিকে দক্ষতাও বাড়ে।

  • শিশুর সক্রিয় পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হাইলাইট করে রাখা যেতে পারে।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিশুর মনোযোগ নষ্ট করে, তাই তার হাতে মুঠোফোন বা ট্যাব দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন
প্রথম আলো
  • তথ্যগুলোকে ছোট ছোট করে ভেঙে দিলেও শিশুর জন্য মনে রাখতে সুবিধা হয়।

  • খেলাধুলা এবং ব্যায়াম শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমায়। বুদ্ধি বাড়াতে, স্মৃতিশক্তি ক্ষুরধার করতে তাই এর ভূমিকাও কম নয়।

  • সুস্থ শরীর, সুন্দর মন। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সুষম খাবারের বিকল্প নেই। বিশেষত খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে শাকসবজি, বাদাম ও বীজ, ডিম, মাছ, ফল। বাজারের প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করাই শ্রেয়।

  • স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। শিশুদের জন্য বয়সভেদে ঘুমের সময়কালের ভিন্নতা আছে। তবে সাধারণত স্কুলে যাওয়া শিশুদের কমপক্ষে ৮-১০ ঘণ্টা গভীর ঘুম প্রয়োজন।

কী করবেন না

  • শিশুকে কোনো ব্যাপারে বেশি চাপ দেবেন না।

  • শিশুকে প্রশ্ন করা থেকে বা তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকা বা বিরক্ত হওয়া উচিত নয়।

  • শিশুকে খুব বেশি প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলবেন না।

  • অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম মনোযোগ নষ্ট করে, তাই তার হাতে মুঠোফোন বা ট্যাব দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

এরপরও শিশুর মনে রাখার সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

আরও পড়ুন