কীভাবে বুঝবেন শিশু ঠিকভাবে বাড়ছে

শিশুর বেড়ে ওঠা মানে কেবল গায়েগতরে বেড়ে ওঠা নয়। শিশু আস্তে আস্তে বসতে শিখবে, একসময় দাঁড়াতে ও হাঁটতে পারবে। মুখে ফুটবে আধো আধো বুলি, একসময় সে বাক্য গড়তেও শিখে যাবে। তবে সব শিশু যে একই বয়সে সবটা শিখে ফেলবে, তা নয়। কাজেই পরিচিত অন্য কারও সন্তান যে বয়সে হাঁটছে, আপনার শিশু সেই বয়সে না হাঁটলেই ভয় পেয়ে যাবেন না। অভিভাবক হিসেবে আপনাকে জানতে হবে, কোন বয়সে হাঁটতে না পারাটা অস্বাভাবিকতা। আবার কোন বয়সে পৌঁছানোর পরও শিশু কথা না বললে সেটি কোনো বড় ধরনের সমস্যার উপসর্গ। সময়মতো নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ। নইলে শিশুর বিকাশের মূল্যবান সময় হারিয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞদের কাছে জেনে নিন, শিশুর বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু ধাপ।

শিশুর ঘাড় শক্ত হয়ে যায় তিন থেকে চার মাস বয়সের মধ্যেই
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

তিন থেকে সাড়ে চার মাস বয়সের মধ্যে শিশু নিজের ঘাড়ের নিয়ন্ত্রণ পায়, যেটিকে আমরা সাধারণভাবে শিশুর ঘাড় শক্ত হওয়া বলে থাকি। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। সেটিও সর্বোচ্চ পাঁচ মাস। ছয় মাস বয়সের মধ্যে শিশুর বসতে পারার কথা; একটু দেরি হলেও সর্বোচ্চ আট মাসের মধ্যে শিশু বসতে পারবে। এক বছর বয়সী শিশু কোনো কিছু ধরে দাঁড়াতে পারে এবং দু-এক পা এগোতেই পারে; দেরি হলেও এইটুকু পারার জন্য সর্বোচ্চ ১৪ মাস লাগাটা স্বাভাবিক। এর বাইরেও কিন্তু শিশুর বিকাশের আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এমনটাই জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট তাসনুভা খান।

আরও পড়ুন

শিশু সাধারণত ছয় থেকে সাত মাস বয়সের মধ্যে হাতের তালুর সাহায্যে কোনো জিনিস ধরতে পারে। ছোট জিনিস ধরতে অবশ্য ১০ থেকে ১১ মাস লেগে যায়। ১৮ মাস বয়সে আঁকিবুঁকি করতে পারে শিশু। অন্যের সঙ্গে আচরণটাও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যের সঙ্গে আচরণের এক বড় ধাপ হলো কথোপকথন।

ঢাকার মিরপুরের ডা. এম আর খান শিশু হাসপাতাল ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লাজিনা শারমিন বলছিলেন, কান্না হলো শিশুর প্রথম ভাষা। এরপর ধাপে ধাপে কথা ফোটে তার মুখে। কথা না বলা মানে কিন্তু এই নয় যে শিশু অটিজমে আক্রান্ত। সঠিক সময়ে কথা না বলতে পারার জন্য দায়ী হতে পারে নানা কারণ।

শিশুর মিষ্টি বুলি

ছয় মাস বয়স থেকেই শিশুর কথা বলা শুরু হয়ে যায় সাধারনত
ছবি: খালেদ সরকার

মাস তিনেক বয়সে শিশু ‘আ’, ‘উ’–জাতীয় শব্দ করে। ছয় মাস বয়সের মধ্যে শিশু ‘দাদা’, ‘বাবা’র মতো দুই বর্ণের শব্দ বলতে পারে, যেখানে একটি বর্ণই বারবার আসে। এক বছর হলে শিশু গোটা দশেক শব্দ বলতে শিখে ফেলে। ১৫ মাসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার ঝুলিতে যুক্ত হয়ে যায় আরও খান পাঁচেক শব্দ। দুই থেকে আড়াই বছর বয়সের মধ্যে শিশু দুটি শব্দ দিয়ে একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গড়তে পারে। এসব ধাপের কোনোটিতে যদি শিশু আটকে যায়, তার মানে কিন্তু অনেক কিছুই হতে পারে। শিশু হয়তো ঠিকভাবে শুনছে না কিংবা তার বাগ্‌যন্ত্রে কোনো সমস্যা আছে। এ রকম হলে কিন্তু শিশু কথা বলতে না পারলেও ইশারা-ইঙ্গিতে নিজের প্রয়োজনটা বুঝিয়ে দেয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, অভিভাবক নিজেই শিশুর সঙ্গে কথা বলেন না। ডিজিটাল জগতে আসক্তি শিশুর দেরিতে কথা বলার অন্যতম কারণ। কিংবা তার সামনে অভিভাবক এক ভাষায় কথা বলছেন, অ্যানিমেশনের চরিত্রগুলো আরেক ভাষায় কথা বলছে। ফলে শিশু কোন ভাষাটা বেছে নেবে, বুঝতে পারছে না। তা ছাড়া কোনো কোনো পরিবারে শিশুদের দেরিতে কথা বলার ইতিহাসও থাকে।

খেয়াল রাখুন

শিশু ঝুনঝুনি বা এ রকম কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পাচ্ছে কি না, সেটি তার চোখ দেখলেই বুঝতে পারবেন।
ছবি: নকশা

চোখের সামনে কোনো কিছু নড়লে শিশু সেটিকে অনুসরণের চেষ্টা করছে কি না, বুঝতে পারবেন, সে চোখে দেখছে কি না। মাস তিনেক বয়সের মধ্যেই এটি বোঝা যায়।

শিশু ঝুনঝুনি বা এ রকম কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পাচ্ছে কি না, সেটিও তার চোখ দেখলেই বুঝতে পারবেন। মাস ছয়েক বয়সের মধ্যেই শিশু শব্দের উৎসকে চিহ্নিত করতে পারে।

এক বছর বয়সের মধ্যে শিশু নিজের পরিচিত পরিমণ্ডলের মানুষগুলোকে চিনতে পারে। অপরিচিত কাউকে দেখলে সে কেঁদেও ফেলতে পারে। এটি স্বাভাবিক।

শিশু যদি একেবারেই কথা না বলে কিংবা অস্বাভাবিকভাবে একই কথা বারবার বলে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

হিংস্র আচরণও একটি অস্বাভাবিকতা।