বারবার হাই ওঠার বিপদগুলো জানেন?  

হাই ওঠা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না
ছবি: পেক্সেলস

ঘুম পেলে হাই ওঠা স্বাভাবিক। ক্লান্ত বা বিরক্ত অবস্থাতেও আপনার হাই উঠতে পারে। সারা দিনে বার কয়েক হাই ওঠা নিতান্তই সাধারণ এক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত হাই ওঠার বিপদও আছে।  
হাই ওঠা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মুখে হাত চেপে কিংবা জোর করে মুখ বন্ধ করে হাই ওঠা পুরোপুরি আটকানো যায় না। এই প্রক্রিয়া অজান্তেই আপনার দেহে শুরু হয়। স্বাভাবিক এই ব্যাপারটিকে কখন গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কেন গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে জানালেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ারর্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।

বারবার হাই উঠছে?

রাতে ক্লান্ত হয়ে বারবার হাই ওঠা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু দিনের বেলা আপনার যদি বারবার অর্থাৎ একটু পরপরই হাই ওঠে, তাহলে ভেবে দেখুন আপনার ঘুমের ঘাটতি আছে কি না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই দিনে বারবার হাই ওঠার কারণ।

আরও পড়ুন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রোজ ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। রাতের ঘুমে দেহের ক্লান্তি দূর হয়, একটা সতেজ সকাল শুরু করেন আপনি। ৭ ঘণ্টার কম ঘুম হলে আপনার দেহে ঘুমের ঘাটতিজনিত প্রভাব পড়বে। আবার ৭ ঘণ্টা ঘুমালেও যদি ঘুমের গুণগত মান ঠিকঠাক না থাকে, সে ক্ষেত্রেও দেহে ঘুমের ঘাটতিজনিত প্রভাব দেখা দেবে। যেমন ঘুমের মাঝে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাঘাত (স্লিপ অ্যাপনিয়া), পায়ের পেশি নড়ে ওঠা (রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম), দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা প্রভৃতি সমস্যা থাকলে পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোর পরও আপনার ঘুমের ঘাটতি থেকে যাবে। অ্যালকোহল এবং কিছু ওষুধের প্রভাবেও দিনের বেলা ক্লান্তি বোধ করেন কেউ কেউ, আর বারবার হাই তোলেন।

রাতে ক্লান্ত হয়ে বারবার হাই ওঠা অস্বাভাবিক নয়
ছবি: পেক্সেলস

তাতে বিপদটা কী?

সুস্থতার জন্য ঘুমের বিকল্প নেই। দিনের বেলা বারবার হাই উঠলে অর্থাৎ ঘুমের ঘাটতি থাকলে আপনার পক্ষে রোজকার স্বাভাবিক কাজ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে, মস্তিষ্ক ধীরে কাজ করতে পারে। বারবার চা-কফি খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করতে পারেন। মিটিংয়ের সময় ঝিমাতে পারেন, চুপচাপ বসে থাকতে গিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারেন।
এ অবস্থায় বিরক্তিও লাগতে পারে। ফলে কেউ কেউ বাজে আচরণও করে বসেন। সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপার হলো, এ অবস্থায় অজান্তেই আপনার মস্তিষ্ক অল্প কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঘুমিয়ে পড়তে পারে। একে বলা হয় মস্তিষ্কের মিনি ন্যাপ বা মাইক্রোস্লিপ।
আপনি হয়তো কোনো সূক্ষ্ম কাজ করছেন, ওই মুহূর্তে আপনার মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ড ঘুমিয়ে নিলে কাজে ভুল হয়ে যেতে পারে। বেশ কিছুদিন এভাবে চলতে থাকলে একসময় আপনার কাজের মান হতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ আপনি যে ইচ্ছা করে কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন না, ব্যাপারটা আদতে তা নয়। গাড়ি চালানো, সবজি কাটা, রান্নাবান্না বা এ ধরনের কোনো কাজের সময় মস্তিষ্ক মাইক্রোস্লিপে চলে গেলে দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে এক নিমেষে। তাই বারবার হাই উঠলে বা ক্লান্তি বোধ করলে অন্তত কিছুটা সময় বিশ্রাম না নিয়ে এ ধরনের কাজ করা উচিত নয়।

ভবিষ্যতের প্রশ্নে

ধরা যাক, অনেক দিন ধরেই দিনের বেলা একটু পরপরই আপনার হাই ওঠে। সে ক্ষেত্রে আশঙ্কা আছে যে আপনি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ঘাটতিতে ভুগছেন। এ রকম চলতে থাকলে নানা ঝুঁকি সৃষ্টি হয়—

  • মস্তিষ্কের স্মৃতিধারণক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে

  • দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বাড়ে

  • স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, বিষণ্ণতা প্রভৃতি রোগের পেছনে ঘুমের ঘাটতি বেশ বড় ভূমিকা রাখে।

বুঝতেই পারছেন, দিনের বেলা বারবার হাই ওঠা মোটেও সাদামাটা ব্যাপার নয়। অথচ অন্য কোনো বিশেষ উপসর্গ না থাকলে দিনে বারবার হাই উঠলেও আপনি মনে করবেন, আপনি দিব্যি আছেন!

জানতে হবে আরও যা

সুস্থ থাকতে ভালো ঘুমের প্রতি গুরুত্ব দিন। সন্ধ্যায় বা রাতে ভারী ব্যায়াম না করাই ভালো। তাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ঘুমের আগে ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে চোখকে বিশ্রাম দিন।
ক্লান্তি কাটাতে বাড়তি চা-কফি গ্রহণই হয়তো আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, ফলে আপনি পরদিন আবারও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কাজের বেলাতেই। একইভাবে বারবার হাই তুলছেন। এই চক্র থেকে বেরোতে চা-কফির মাত্রা কমিয়ে দিন, বিকেলের মধ্যেই চা-কফির পর্ব চুকিয়ে ফেলুন।
খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে ঘুমের ঘাটতি ছাড়াও কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে বারবার হাই উঠতে পারে। এমন ক্ষেত্রে অবশ্য অন্যান্য শারীরিক উপসর্গও দেখা দেয়। এ রকম হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন