পাইলসের কারণ, উপসর্গ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা কী
পাইলস বা হেমোরয়েড হলে পায়ুপথে বিদ্যমান রক্তনালি ফুলে যায় বা প্রদাহ হয়। অর্শরোগের উপসর্গ এর ধরনের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত অভ্যন্তরীণ অর্শরোগের ক্ষেত্রে মলদ্বারে রক্তপাত হয়, যা বেদনাবিহীন। আর বাহ্যিক অর্শরোগ হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে, থ্রমবোজড হলে তা মলদ্বার অঞ্চলে ব্যথা ও স্ফীতির কারণ হতে পারে। অনেকে পায়ুপথের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই তা ‘হেমোরয়েডস’ ভেবে ভুল করেন, আসলে সব সমস্যাই পাইলস নয়।
উপসর্গ
অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হেমোরয়েডস আলাদাভাবে দেখা দিতে পারে; আবার অনেকের দুটিই থাকতে পারে। থ্রমবোজড বা রক্তনালিতে গঠিত হলে হেমোরয়েডস অত্যন্ত বেদনাদায়ক হতে পারে। হেমোরয়েডস বড় আকারের ও অস্বাস্থ্যকর হলে চারদিকের ত্বকে অস্বস্তি ও চুলকানি হতে পারে। অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডস হলে সচরাচর বেদনাহীন থাকে, উজ্জ্বল লাল রঙের রক্তপাত বা রেকটাল ব্লিডিং হতে পারে। মল রক্ত দ্বারা আবৃত থাকতে পারে, যে অবস্থাকে হেমাটোকেজিয়া বলে। এ ক্ষেত্রে টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা যেতে পারে বা টয়লেটেও রক্তের ফোঁটা ঝরতে পারে। মলের রং সচরাচর স্বাভাবিক হয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্লৈষ্মিক স্রাব, মলদ্বারের চারদিকের অংশ পায়ুপথে বেরিয়ে আসা, চুলকানি ও ফিকাল ইনকনটিনেন্স (পায়ুপথে গ্যাস বা মল নির্গমনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণহীনতা)।
কারণ
হেমোরয়েডসের পেছনে যেসব কারণ দায়ী বলে ধারণা করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে: ১. দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা ২. পুরোনো ডায়রিয়া ৩. মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ৪. আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারী মালপত্র বহন করা, স্থূলতা, কায়িক শ্রম কম করা, ৫. অন্ত্রের সমস্যা (কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া), ব্যায়াম ও পুষ্টি উপাদানে ঘাটতি (স্বল্প আঁশসমৃদ্ধ খাবার), পেটের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি (দীর্ঘায়িত চাপ), ৬. গর্ভাবস্থা ৭. জন্মগত, হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য। গর্ভাবস্থায় তলপেটের ওপর ভ্রূণের চাপ ও হরমোনের পরিবর্তনের ফলে হেমোরয়েড রক্তনালি বর্ধিত হয়। প্রসবের কারণেও পেটের ভেতরে চাপ বৃদ্ধি পায়। তবে প্রসবের পর সচরাচর উপসর্গ আর থাকে না।
রোগনির্ণয়
শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে পায়ু ও এর আশপাশের এলাকা ভালোভাবে পরীক্ষা করে বাহ্যিক বা স্থানচ্যুত হেমোরয়েড নির্ণয় করা যেতে পারে। মলদ্বারের টিউমার, পলিপ, বর্ধিত প্রস্টেট বা ফোড়া শনাক্ত করতে মলদ্বার পরীক্ষা করতে হবে।
প্রতিরোধ
মলত্যাগের সময় জোরে চাপ না দেওয়া, আঁশযুক্ত খাদ্য ও প্রচুর তরল বা আঁশের সম্পূরক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া এড়িয়ে চলা এবং পর্যাপ্ত ব্যায়াম করা। মলত্যাগকালে অল্প সময় ব্যয়, টয়লেটে বসে পড়া বন্ধ করা এবং অতিরিক্ত ওজন থাকলে ওজন কমানো, ভারী বস্তু উত্তোলন পরিহার করা উচিত।
চিকিৎসা কী
● এক্সিশনাল হেমোরয়েডেক্টমি/ওপেন হেমোরয়েডেক্টমি।
● ট্রান্সানাল হেমোরয়েডাল দিয়ার্তেরিয়ালাইজেশন।
● স্টেপলড হেমোরয়েডেক্টমি, স্টেপলড হেমোরয়েডোপেক্সি—এগুলো ব্যবহৃত পদ্ধতি।
রতন লাল সাহা, কনসালট্যান্ট, জেনারেল এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ, আলোক হাসপাতাল, মিরপুর ৬