শিশুর নাড়িতে প্যাঁচ লাগে কেন?

শিশুর নাড়ি পেঁচিয়ে গেলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

ছোট শিশুদের নাড়ি বা অন্ত্রে প্যাঁচ (ইন্টুসাসেপশন) একটি জটিল সমস্যা। অনেক শিশুরই এই সমস্যা হতে দেখা যায়। তার আগে জেনে নিন এই নাড়িতে প্যাঁচ আসলে কী। পরিপাকতন্ত্রে দুটি অংশ আছে, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদান্ত্র। একেই আমরা সহজ ভাষায় নাড়িভুঁড়ি বলে থাকি। এই লম্বা নলাকৃতির অন্ত্র স্বাভাবিকভাবে পেটের ভেতর প্যাঁচানো অবস্থায় থাকে। যার কাজ পরিপাককৃত খাবারকে মল রূপে শরীরের বাইরে বের করে দেওয়া। এই অন্ত্রেরই একটি অংশ যখন অন্য অংশের ভেতর ঢুকে যায়, তখনই শুরু হয় অন্ত্রের প্রদাহ, পরিপাককৃত খাদ্য সেখানে আটকে গিয়ে তৈরি হয় প্রতিবন্ধকতা। সামান্য পেটব্যথা দিয়ে শুরু হলেও এই সমস্যায় ব্যবস্থা না নিলে অপারেশন পর্যন্ত করাতে হতে পারে।

কেন এই সমস্যা হয়

৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের আন্ত্রিক প্যাঁচের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে দেখা গেছে, ৬ মাস পূরণ হওয়ার আগেই যেসব শিশুর দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা হয় বা পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অন্ত্রে পলিপ, ডাইভারটিকুলাম (অন্ত্রের প্রাচীরে পিণ্ড), অ্যাপেন্ডিসাইটিস ইত্যাদি।

উপসর্গ কী

সাধারণত ৬ মাস থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে আন্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়। তবে ৪ থেকে ১০ মাস বয়সের শিশুরাই আক্রান্ত হয় বেশি। শিশু এই সমস্যায় পড়লে প্রাথমিকভাবে কিছু উপসর্গ দেখা যায়—

  • অতিরিক্ত কান্নাকাটি

  • পেটব্যথায় কিছুক্ষণ পরপর কুঁকড়ে যাওয়া

  • অস্থিরতা

  • বমি

  • পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া, রক্ত মিশ্রিত আম যাওয়া

  • পেটে চাকার মতো শক্ত কিছু অনুভূত হওয়া

  • জ্বর

  • নিস্তেজ হয়ে পড়া

  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া

  • শিশুর নাড়ি প্যাঁচালে করণীয়

অনেক সময় এই উপসর্গগুলো আমাশয়ের সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু সময় নষ্ট না করে একজন শিশু সার্জনের পরামর্শ নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাফির মতো একটি সহজ পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো। এই পরীক্ষাতেই রোগটি নির্ণয় করা যায়। সময় মতো চিকিত্সা শুরু করলে কনজারভেটিভ চিকিত্সাতেই শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ হয়।

ডা. শাবনাম রাশেদী, যিনি বাসস্থানিক সার্জন (শিশু সার্জারি) হিসেবে কর্মরত, তিনি সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন।