জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিং কেন, কখন ও কীভাবে করাবেন
বর্তমানে নারীদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার অন্যতম প্রাণঘাতী রোগ হয়ে উঠেছে। গ্লোবোকন নামের স্বাস্থ্যবিষয়ক এক জরিপ সংস্থার হিসাবে, ২০২০ সালে দেশে এ ক্যানসারের নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২৬৮। এটি ভয়ানক চিত্র। জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের অত্যন্ত কষ্টকর, ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। সে জন্য দরকার সব শ্রেণির নারীর স্ক্রিনিং। মানে সুস্থ অবস্থায়ই ঝুঁকি নির্ণয় করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
স্ক্রিনিং কেন ও কখন
প্রথমত, আপনি জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন কি না, সেটা নিশ্চিত হতে স্ক্রিনিং করা প্রয়োজন। এটি যেকোনো সময় করতে পারেন। আর কোনো ধরনের উপসর্গ অনুভব করলে অবশ্যই করা উচিত। আপনি ঝুঁকিমুক্ত থাকলে আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও স্ক্রিনিং করা দরকার। সর্বোপরি, কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে স্ক্রিনিং খুব জরুরি।
জরায়ুমুখ ক্যানসারের স্ক্রিনিং অত্যন্ত সহজ, প্রায় সব জায়গায়ই করানো যায় এবং এতে কোনো ধরনের জটিলতা নেই।
লক্ষণ ও প্রাথমিক সংকেত
দুই পিরিয়ডের মধ্যবর্তী অনিয়মিত রক্তপাত।
সহবাসের পর রক্তপাত।
মেনোপজের পর রক্তপাত।
সহবাসের সময় অস্বস্তি বা রক্তপাত।
তীব্র গন্ধযুক্ত যোনিস্রাব। রক্তের সঙ্গে যোনিস্রাব।
কারা ঝুঁকিতে
অল্প বয়সে বিয়ে বা যৌনমিলনে অভ্যস্ত হওয়া।
একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা। অধিক সন্তানের জন্মদান।
দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার।
কীভাবে স্ক্রিনিং
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। আপনি ৩০ বছরের নারী হলে ৩ থেকে ৫ বছর পরপর জরায়ুমুখের স্ক্রিনিং করাবেন। অর্থাৎ সাধারণ একটি পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার অবস্থা জেনে নেবেন। আজকাল এ পরীক্ষা অত্যন্ত সহজ, প্রায় সব জায়গায়ই করানো যায় এবং এতে কোনো ধরনের জটিলতা নেই। ভায়া টেস্ট, প্যাপস স্মিয়ার, এইচপিভি ডিএনএ কিংবা কলপোস্কপির যেকোনো পদ্ধতিতে স্ক্রিনিং করা যায়। একজন গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আপনার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেবেন।
শেষ কথা
উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে এই জটিল রোগ সম্পর্কে আপনি আপনার অবস্থা জেনে নিতে পারেন। প্রতিরোধের উপায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনভাবেই আপনার এগিয়ে আসা উচিত। তবে কখনো উল্লেখিত লক্ষণগুলোর কোনোটি দেখা দিলে দ্রুত একজন গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। যত দ্রুত স্ক্রিনিং করা যাবে, চিকিৎসার মাধ্যমে তত দ্রুত আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা থাকবে।
ডা. ফারজানা ইসলাম বীথি, স্ত্রীরোগ ও গাইনি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট, মহাখালী, ঢাকা