আমি রাতে কেবল এক কাপ চা খাই, সমস্যা হবে?

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ

শামছুন্নাহার নাহিদছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলো :

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৫ বছর। আমি একজন ছেলে। আমি ডায়েট করে চলার চেষ্টা করি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডাল, ভাত ও সবজি খাই। আবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ভাত, মাছ, ডাল ও সবজি খাই। রাতে এক কাপ চা ছাড়া আর কিছু খাই না। ভবিষ্যতে এতে আমার কোনো শারীরিক সমস্যা হতে পারে কি?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর: আপনি যে পদ্ধতিতে ডায়েট করার কথা বলছেন, মূলত তা কোনো ডায়েট নয়। যেকোনো খাবার, যেকোনোভাবে খেলেই তাকে ডায়েট বলা যায় না। ডায়েট হলো একজন ব্যক্তির শরীরে সারা দিনের প্রয়োজন অনুযায়ী সব কটি পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সহায়ক এমন খাবারের তালিকা।

ওই ব্যক্তির শারীরিক সমস্যা বা অসুবিধার ওপর নির্ভর করে কোন কোন খাবার, কখন, কতটা খেতে পারবেন, কোন খাবার না খাওয়া ভালো, ডায়েট করার সময় এসব বিবেচনায় রাখা হয়। ডায়েট একটা বিজ্ঞানসম্মত খাদ্যতালিকা, যা মানুষকে সুস্থ রাখে, পুষ্টিহীনতা প্রতিরোধ করে, শরীরের চাহিদা অনুযায়ী শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করে এবং কোনো রোগ থাকলে তা নিরাময়ে সহায়তা করে।

অনেকে ভাবেন, ডায়েট মানে শুধু কম কম খাওয়া বা ওজন কমানোর জন্য খাওয়া বা না খেয়ে থাকা। এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা। ডায়েটের প্রয়োজন হতে পারে সব বয়সে, সব শারীরিক অবস্থায়ই। কিছু কিছু সময় বেশি ক্যালরি, বেশি পুষ্টিযুক্ত ডায়েট দরকার হয়। যেমন গর্ভকালীন ডায়েট, কিশোর-কিশোরীদের ডায়েট, খেলোয়াড়দের ডায়েট, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমকারীদের ডায়েট। আছে ওজন বাড়ানোর ডায়েট, ওজন কমানোর ডায়েট। আবার বিভিন্ন রোগের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের ডায়েট করা হয়, এটাকে বলে ‘মেডিকেল নিউট্রিশন থেরাপি’ বা ‘থেরাপিউটিক ডায়েট’।

প্রতিটি ডায়েটের কিছু নীতিমালা আছে, যার মূল উদ্দেশ্যই থাকে ব্যক্তির পুষ্টিগত মান স্বাভাবিক রেখে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা। যখনই অবৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতিতে কেউ ডায়েট করতে থাকবে, তখনই ধীরে ধীরে তার শরীরে পুষ্টির অভাবজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ ও সমস্যা দেখা দিতে থাকবে, যা থেকে পরে অনেক বড় রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন আপনি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭ ঘণ্টা এবং তারপর ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকছেন, এতে ধীরে ধীরে প্রথমে আপনার অ্যাসিডিটি, পরে আলসার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

অন্যদিকে দিনে মাত্র দুবার খাবার খাওয়ায় শরীরে পুষ্টি চাহিদার ঘাটতি থেকে আপনার দৈনন্দিন কাজের শক্তি কমতে থাকবে। পাশাপাশি পুষ্টির অভাবে চুল পড়া, নখ ভাঙা, হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। মনে রাখবেন, শরীর সুস্থ রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খাবার না খেয়ে কখনোই যা রাখা সম্ভব নয়। খাবার খেতে হবে, তবে তা হতে হবে সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত। পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম করে শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে হবে। তাহলেই খাবারের ক্যালরি কাজে লাগিয়ে শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। মনে রাখবেন, ভুল নিয়ম আপনার শারীরিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক সুস্থতা, শান্তি ও সচ্ছলতা নষ্ট করতে পারে।