ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন? এই বিষয়গুলো খেয়াল করুন

ডাক্তারখানায় যাওয়ার আগে অবশ্যই একটা প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া ভালো
ছবি: সংগৃহীত

শরীরের নাম মহাশয় বলা হলেও সব সময় শরীরে সবকিছু সয় না। নানা কারণেই আমাদের শরীরে হতে পারে গড়বড়। তাই ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাওয়া অনেকের কাছেই সুখকর কিছু নয়। অনেকে এ নিয়ে চাপ বোধ করেন, আতঙ্কগ্রস্তও হয়ে পড়েন। অনেকে ডাক্তারের সামনে গিয়ে মন খুলে বলতে পারেন না, আবার অনেকে সঠিকভাবে নিজের সমস্যাটাও বোঝাতে পারেন না। এমনকি অনেকের এমনও হয় যে হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাওয়া মাত্র রক্তচাপ বেড়ে যায়। আসলে ডাক্তারের কাছে অল্প সময়ের সাক্ষাৎকালীন অনেক কিছু বলতে হয়, বোঝাতে হয়, আবার বুঝে আসতেও হয়। অকারণ কথায় সময় নষ্ট করাও চলবে না। তাই ডাক্তারখানায় যাওয়ার আগে অবশ্যই একটা প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া ভালো।

ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো শারীরিক সমস্যাগুলোর কথা খুলে বলা। আর এটা করতে গিয়েই যত অসুবিধা। কেউ রাজ্যের সাতকাহন বলেও আসল কথাটি প্রকাশ করতে পারেন না, কেউ ভুলে যান অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কেউ আবার কথাই খুঁজে পান না। তাই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই ভালো করে গুছিয়ে নিয়ে, অল্প সময়ের ভেতর নিজের মূল সমস্যাগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে গেলে রোগী বা ডাক্তার উভয়েরই বেশ সুবিধা হয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো লিখে বা তালিকা করে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

কারও যদি উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকে, তাহলে তা অবশ্যই প্রথমেই উল্লেখ করা ভালো। সেই সঙ্গে ক্রনিক এসব রোগের বর্তমান অবস্থা, এটি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, এর জন্য কী কী ওষুধ খাওয়া হচ্ছে, তার পূর্ণ এবং সঠিক বিবরণ খুবই দরকার।

রোগী বর্তমানে কী কী ওষুধ খাচ্ছেন, তার নাম, পরিমাণ—এই সব তথ্যই চিকিৎসকের জানা খুব জরুরি। প্রেসক্রিপশন হাতের কাছে না থাকলে প্রয়োজনে ওষুধের ছবি বা ওষুধের পাতা সঙ্গে করে নিয়েও যাওয়া যায়।

বর্তমান সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর পূর্ব ইতিহাস, যেমন আগে কোনো জটিল রোগে ভুগেছিলেন কি না (যেমন যক্ষ্মা, ক্যানসার ইত্যাদি), ইতিপূর্বে কোনো অপারেশন হয়েছিল কি না, এসব ইতিহাস জানানো দরকার। কিছু রোগের ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেমন কিছু রক্তরোগ, কিডনিজনিত সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাইরয়েডের সমস্যা। তাই পরিবারের কারও এমন সমস্যা থাকলে, তা চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন।

কারও কারও ক্ষেত্রে কোনো কোনো ওষুধে অতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে, যেমন কোনো বিশেষ অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথানাশক খেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়, রোগী আগেই চিকিৎসককে তা অবহিত না করলে পরবর্তী সময়ে ওষুধের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কেউ যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা এ–জাতীয় কোনো ওষুধ রোজ খেয়ে থাকেন, তা–ও জানাতে হবে।

অতএব নিজের শারীরিক সমস্যা গুছিয়ে বলার পাশাপাশি অতীত ইতিহাস বা ওষুধসংক্রান্ত তথ্যগুলোও প্রয়োজন। তবে সব রোগের বিস্তারিত তথ্য না–ও লাগতে পারে, অনেক সময় চিকিৎসক আনুষঙ্গিক প্রশ্ন করে থাকেন। সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সংক্ষিপ্ত উত্তর দিতে চেষ্টা করুন। অনেকেই রোগ বর্ণনা দিতে গিয়ে নানা অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের অবতারণা করে ফেলেন, যেমন অন্য চিকিৎসকের দোষ-গুণ পর্যালোচনা, বিদেশে চিকিৎসার অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা বা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তাঁর অনীহা বা ক্ষোভ। এতে করে আপনার চিকিৎসক বিরক্ত বোধ করতে পারেন। সময়ও নষ্ট হয়। তাই প্রয়োজনীয় তথ্য সুন্দর করে গুছিয়ে বলাটা জরুরি। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সময় আগের ব্যবস্থাপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র ফাইল করে নিয়ে গেলে ভালো।

সবশেষে, নতুন প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র হাতে পেলে ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই রোগযন্ত্রণা বা দুশ্চিন্তার কারণে অস্থির হয়ে থাকেন, পূর্ণ মনোযোগসহকারে বলতে বা শুনতে পারেন না, সে ক্ষেত্রে সঙ্গে একজন পূর্ণবয়স্ক আত্মীয়পরিজন থাকলে ভালো হয়। তাড়াহুড়ো বা অকারণ দেরি কোনোটাই ভালো নয়। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা অস্থির না হয়ে, বিরক্ত বা রাগান্বিত না হয়ে দরকারি কথাগুলো বোঝাতে পারলে সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায়।

*ডা. শাহনূর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ