ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুরক্ষা পেতে যে কাজগুলো করতে পারেন
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো শিশুর মর্মস্পর্শী মৃত্যুসংবাদ পড়ে আমরা স্তব্ধ হয়ে যাই। সন্তানহারা মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলি। অনেকেই বয়ে বেড়াচ্ছেন আপনজনের এমন মৃত্যুর স্মৃতি। হয়তো আজীবনই সঙ্গী হয়ে থাকবে সেই বেদনা। এমন বেদনাবিধুর, মর্মান্তিক ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সেটাই আমাদের চাওয়া। সবাইকে তাই সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গড়ে তুলতে হবে সঠিক সুরক্ষাব্যবস্থা।
প্রথম পদক্ষেপ পরিবার থেকেই নিতে হবে। যেকোনো বয়সী ব্যক্তিই ডেঙ্গুজ্বরের ভয়াবহতায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই মশা থেকে সুরক্ষা সবারই প্রয়োজন। মশার বিস্তার রোধ করতে ব্যবস্থা নিন এখনই। এলাকাভিত্তিক সুরক্ষাব্যবস্থাও জরুরি। ডেঙ্গু ছড়ায় মশার কামড়ে। আর মশা বংশবিস্তার করে আবদ্ধ পানিতে। তাই ঘরের ভেতরে, বারান্দায়, ছাদে, এমনকি ভবনের আশপাশের কোনো জায়গায় পানি জমে থাকতে দেবেন না। আর এই মৌসুমের জ্বরকে অবহেলা করা যাবে না; বরং ডেঙ্গুজ্বরের যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হবে সময়মতো। চিকিৎসা ও সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হতে পারে। ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায় সম্পর্কে এমন নানা পরামর্শ দিয়েছেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।
শত্রু যখন মশা
দিনে বা রাতে যখনই শোবেন, মশারি ব্যবহার করুন। মশারি ভালোভাবে গুঁজে দিতেও ভুলবেন না। মশারিতে কোনো বড় ছিদ্র আছে কি না, খেয়াল রাখুন।
মশারির বাইরে থাকার সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরুন, যাতে হাত-পা ও শরীর ভালোভাবে ঢেকে থাকে। পোশাকে মশানিরোধী পদার্থ (মসকিউটো রিপেলান্ট) ব্যবহার করতে পারেন। তবে তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য রিপেলান্ট না।
ঘরের জানালা, বাথরুমের জানালা ও বারান্দার দরজায় ছোট ছিদ্রের নেট লাগিয়ে নিতে পারেন।
ধূপ জ্বালাতে পারেন।
কীটনাশক স্প্রে (অ্যারোসল) ব্যবহার করলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন। অ্যারোসলে অ্যাজমা বা শ্বাসের অন্য কোনো সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং শিশু ও পোষা প্রাণীর সমস্যা হতে পারে।
মশা তাড়াতে কয়েলের ব্যবহারও এড়িয়ে চলা ভালো। শ্বাসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি, শিশু ও পোষা প্রাণীদের এতেও সমস্যা হতে পারে। শিশু বা পোষা প্রাণী যেন কয়েলের কারণে দুর্ঘটনায় না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাবেন না।
বাইরে যখন মশার ওষুধ দেওয়া হয়, তখন নিজের বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও জরুরি
আইসক্রিম বা দইয়ের খালি পাত্র যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়া যাবে না। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখলে এগুলোয় পানি জমতে পারে, হয়ে উঠতে পারে মশার আবাসস্থল। বরং নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় জিনিস, যাতে দ্রুততম সময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেটি সরিয়ে নিতে পারেন। ডাবের খোল বা এ ধরনের যা কিছুতে পানি জমতে পারে, সবকিছুর জন্যই বিষয়টি মাথায় রাখুন। আবার এমন ময়লাও যেখানে-সেখানে ফেলা ঠিক নয়, যেগুলো জমে গিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করতে পারে। অর্থাৎ সব ধরনের বর্জ্যই ফেলতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায়।
গাছ কিন্তু শত্রু নয়
গাছপালা আমাদের বন্ধু। মশা তাড়াতে গাছ সরিয়ে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই; বরং গাছের যত্নে সচেতন হোন। গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে দেবেন না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি দেবেন না। গাছের টবের নিচে রাখা প্লেটেও পানি জমতে পারে। এগুলো থেকে পানি সরিয়ে ফেলুন। এমনকি জলজ উদ্ভিদ রাখা হলেও প্রতি ৭২ ঘণ্টায় যদি পাত্রের পানি বদলে ফেলতে পারেন, তাহলে সমস্যা নেই। তা ছাড়া জলজ উদ্ভিদের জন্য ব্যবহৃত জায়গাটি যথেষ্ট বড় হলে গাপ্পি কিংবা গাম্বুসিয়া মাছও ছেড়ে দিতে পারেন। এসব মাছ মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে।
আরও যত জমা পানি
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র থেকে নিঃসৃত পানি জমা হতে দেওয়া যাবে না। ফ্রিজের পানিও জমতে পারে বাড়িতে। এ ধরনের সব জমা পানিই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফেলে দিতে হবে। অব্যবহৃত কমোড ঢেকে রাখুন। আধুনিক শহুরে জীবনের বড় ঝক্কি নির্মাণাধীন ভবন। বাড়ির আশপাশে নির্মাণাধীন ভবন থাকলে সেখানে পানি জমা থাকছে কি না, খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে এলাকার সবাই মিলে ভবন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বা জমির মালিক ও নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলুন। এ ছাড়া এলাকার কোথাও পানি জমে থাকার আশঙ্কা থাকলে সেই জায়গা নিজেরাই পরিষ্কার করে ফেলুন। প্রয়োজনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সহায়তা নিন।