ব্রেন এজিং কি বংশগত

ব্রেন এজিং বা মস্তিষ্কের বার্ধক্যের অন্যতম প্রধান লক্ষণ ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। আজকাল ব্রেন এজিংয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ সমস্যা শুরু হলে মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে, অর্থাৎ ব্রেন শুকিয়ে যেতে থাকে।

মস্তিষ্কের কোষগুলো আস্তে আস্তে অকার্যকর হতে থাকে। কোষের আয়তন কমতে থাকলে মানুষের স্মৃতিশক্তি, বুদ্ধি ও দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলে।

কেউ পঁয়ষট্টিতেই সব ভুলে যেতে শুরু করেন। আবার কেউ আশিতেও প্রখর স্মৃতিশক্তি নিয়ে বেঁচে থাকেন। এমনটা কেন হয়? মস্তিষ্ক যদি কাজ না করে অলসভাবে দিন কাটায়, তাহলে ব্রেন এজিংয়ের প্রক্রিয়াও শুরু হবে অনেক আগে ও দ্রুত হারে। কিন্তু ব্রেন যদি সক্রিয় থাকে, তাহলে এজিংয়ের প্রক্রিয়া কিন্তু অনেক ধীরগতিতে হয়।

যাঁরা অনেক পড়াশোনা করেছেন বা পেশার কারণে পড়াশোনা বা ফিল্ডওয়ার্কে যুক্ত আছেন, তাঁদের এজিং–প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়। বংশগত কারণও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারে যদি নিকটাত্মীয়দের মধ্যে অল্প বয়সেই মস্তিষ্কে বার্ধক্য আসার প্রবণতা থাকে, তাহলে পরবর্তী বংশধরদের মধ্যেও এটা হতে পারে। আবার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনপ্রক্রিয়া ও হরমোনাল কারণেও এজিং–প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়।

ব্রেন এজিংয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে কোনো ঘটনা, জিনিস বা কারোর নাম, ঠিক সময়ে ঠিক শব্দটা সহজে মনে পড়তে চায় না। এতে বুঝতে হবে, মস্তিষ্কের যে জায়গায় শব্দগুলোর ভান্ডার, সেখান থেকে ঠিক সময়ে তা বেরিয়ে আসছে না। এরপর দেখা যায়, ছোটখাটো কাজ করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে খুব সাধারণ কোনো দৈনন্দিন কাজ, যেমন কোনো একটা জিনিস বিছানা থেকে টেবিলে সরিয়ে রাখা, সঠিক জায়গায় কিছু গুছিয়ে রাখা—এগুলো করতেও অসুবিধা হতে পারে।

বয়স্কদের মধ্যে প্রায়ই দেখা যায়, কোনো জিনিস যথাস্থানে রাখতে পারছেন না। কখন কী করা উচিত, কাকে কী বলা উচিত, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না। এরই হাত ধরে আসে ডিপ্রেশন। সবার সঙ্গে মেলামেশা বা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। ব্রেনের ক্ষয় যত বাড়তে থাকে, এই লক্ষণগুলো ততই প্রকট হতে শুরু করে।

মস্তিষ্কের মনে রাখার অংশটি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এই লক্ষণগুলো আবার দুইভাবে দেখা দেয়। কিছু কিছু অসুখ রয়েছে যাতে সাময়িকভাবে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে। যেমন মাথায় টিউমার, স্ট্রোক, থাইরয়েড, এনকেফেলাইটিস ইনফেকশন জাতীয় কারণে সাময়িকভাবে স্মৃতি লোপ পেতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব থেকেও সাময়িক স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।

মানসিক সমস্যা, অত্যধিক স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, হতাশা থেকেও ভুলে যাওয়ার সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়। অসুখের কারণে স্মৃতিলোপ হলে তার চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু বয়সজনিত ব্রেন এজিং বা ব্রেন ডিজেনারেশনের তেমন কোনো চিকিৎসা এখনো নেই। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এজিং–প্রক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। এর জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।

ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন-এ, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড–সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্ক সুস্থ ও সচল রাখে। চিনি এড়িয়ে চলতে হবে ও সরল শর্করা কম খেতে হবে। সর্বক্ষণ নানা ধরনের কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্ক সচল রাখা উচিত। অবসর নেওয়ার পর নিয়মিত বই ও পত্রিকা পড়া, সুডোকু বা পাজল সমাধান ইত্যাদি করা ভালো।

  • অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ