কোমরব্যথা মানেই কি কিডনির সমস্যা

বিভিন্ন কারণেই কোমরব্যথা হতে পারে
ছবি: প্রথম আলো

কদিন ধরে কোমরে ব্যথা করছে, কিডনিতে কিছু হলো না তো?

আমাদের মধ্যে এমন একটা ধারণা আছে, কোমরে ব্যথা মানেই কিডনিতে কোনো সমস্যা। যেহেতু এক জোড়া কিডনির অবস্থান মেরুদণ্ডের নিচের দিকের দুই পাশে। তাই অবস্থানগত কারণেই মানুষের মধ্যে কোমরের ব্যথার সঙ্গে কিডনির সম্পর্ক আছে, এমন একটা ভাবনা কাজ করে। কিন্তু কোমরের ব্যথার যত কারণ আছে, তার ভেতর কিডনির সমস্যা খুব বিরল।

কখনো কখনো কিডনিতে সংক্রমণ বা পাথর হলে মেরুদণ্ডের নিচের দুই পাশে ব্যথা হলেও হতে পারে, কিন্তু তার সঙ্গে জ্বর, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ইত্যাদি উপসর্গও থাকে। কিডনি বিকলজনিত বেশির ভাগ সমস্যায় কোমরে ব্যথা খুব বেশি হয় না। বরং আঘাতজনিত কারণ, অতিমাত্রায় পরিশ্রম বা ভারী জিনিস উত্তোলন, দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা গাড়ি চালানোর মতো কাজ করার কারণে কোমরব্যথার মতো উপসর্গ বেশি দেখা যায়। আবার মেরুদণ্ডের নানা সমস্যা যেমন স্পন্ডালাইটিস, বয়সজনিত বাত বা অস্টিওপরোসিস ইত্যাদির কারণে কোমরে ব্যথা হতে পারে। কিছু মারাত্মক রোগ যেমন মেরুদণ্ডের টিবি, হাড়ের ক্যানসারও কোমরে ব্যথার গুরুত্বপূর্ণ কারণ। মাংসপেশির সমস্যার কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। ইদানীং ওজন বৃদ্ধির সমস্যা বেশ প্রকট। অতিরিক্ত ওজন হলে কোনো রোগ ছাড়াই কোমরে ব্যথা নিয়ে রোগী হাজির হতে পারেন চিকিৎসকের কাছে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস থেকেও শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা হয়, কোমরেও ব্যথা হতে পারে। তবে সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের কোমরব্যথার উপসর্গ বেশি দেখা যায়।

আরও পড়ুন

কারণ যা–ই হোক না কেন, ঘাবড়ে গেলে চলবে না। কোমরে ব্যথা মানেই কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, এমন ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। বলা হয়, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ জীবদ্দশায় কখনো না কখনো কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হন। আর এ ধরনের কোমরে ব্যথার পেছনে তেমন জটিল কারণ থাকে না। এগুলো সাধারণত মেকানিক্যাল ব্যাকপেইন। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলে, সাধারণ কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে, সঙ্গে কিছু ব্যথানাশক খেলেই ব্যথা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কখনো কখনো কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম বা ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। তবে মারাত্মক বা জটিল ব্যথার উপসর্গের ব্যাপারে সচেতন হওয়া খুব জরুরি। বিশেষ করে যেসব ব্যথার সঙ্গে জ্বর, ওজন হ্রাস, মারাত্মক ব্যথার কারণে প্রাত্যহিক কাজকর্ম বা নিদ্রায় ব্যাঘাত, কোমরের ব্যথা পায়ের নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়া, প্রস্রাব পায়খানা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা, পায়ে অবশ ভাব, ব্যথানাশকেও ব্যথার প্রশমন না হওয়ার মতো ব্যথার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো জটিল কারণ থাকলে, তা উদ্‌ঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ব্যথা নিবারক ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে সচেতন থাকাটা খুব দরকার। অনেকেই বেশুমার ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকেন, যা কিনা পরবর্তীকালে কিডনির সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে, কোমরে ব্যথা কিডনি রোগের কারণে না হলেও ব্যথার ওষুধ থেকে কিন্তু কিডনি রোগ হতেই পারে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ