পাঠকের প্রশ্ন: ডায়েট
ইউটিউব দেখে ওজন কমাতে গিয়েছিলাম
ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ।
প্রশ্ন : আমার বয়স ২৪ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ১ ইঞ্চি, ওজন ৪২ কেজি। খাবারের রুচি কম। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঘুম আসতে চায় না। ফলে দিনে অনেক দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। আজকাল আমি খুব অল্পতেই রেগে যাই। সবকিছুই যেন অসহ্য লাগে। প্রাণ খুলে হাসতে পারি না। সব সময় মনমরা হয়ে থাকি, নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। সামান্য কারণেই পরিবারের সবার সঙ্গে রাগারাগি করি। এটা কি আমার শারীরিক গঠনের কারণ হতে পারে?
নাদিয়া (ছদ্মনাম), ঢাকা
উত্তর: তোমার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন থাকা দরকার ৪৫ থেকে ৫৭ কেজির মধ্যে। অর্থাৎ ৩–৪ কেজি ওজন বাড়াতে হবে। তোমার খিটখিটে মেজাজের জন্য প্রথমত, খাবার কম খাওয়া দায়ী। কারণ, পরিমাণমতো না খেলে একদিকে মস্তিষ্ক তার চাহিদা পূরণের গ্লুকোজ পায় না, পাশাপাশি শরীর শক্তির ঘাটতিতে দুর্বল হয়ে যেতে থাকে। তখন অবসন্নতা ছেয়ে যায়, কাজ করতে শক্তি পাওয়া যায় না, আবার ক্ষুধা পেটে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না। দ্বিতীয়ত, ঘুমের ঘাটতিতে আমাদের শরীরে কিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। তখন শারীরিক ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়, আবার ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়। তোমার এ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করতে হলে শারীরিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অভাব পূরণ করতে হবে। সময় ও পরিমাণমতো পছন্দসই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে (ঘুমানোর আগে সব ধরনের যন্ত্র বন্ধ করে চোখকে শান্তিতে ঘুমাতে দিতে হবে), প্রতিদিন কিছু ব্যায়াম করো, ভালো লাগার কাজগুলো করার চেষ্টা করো, যাতে মনে প্রফুল্লতা আসে, দেখবে অল্প সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দুই–ই ফেরত পাওয়া সহজ হবে।
প্রশ্ন: আমার ওজন উচ্চতার তুলনায় ২৩ কেজি বেশি। করোনার সময়ে আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে ডায়েট শুরু করি। শুরুতে ১২-১৩ কেজি কমে গিয়েছিল তিন মাসে, এরপর আর কমেনি। এক মাসে আধা কেজি বা এক কেজি কমে, পরের তিন মাসে মোট দুই কেজি কমেছে। এদিকে আমি ভাত খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। অনেক দুর্বল লাগে, চোখ ঝাপসা লাগে। গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে, বুক জ্বালাপোড়া করে। আমি আরও ১০ কেজি ওজন কমাতে চাই। কীভাবে কমাব?
শিল্পী, খুলনা
উত্তর: যেকোনো মানুষের ওজন বাড়ার পেছনে কিছু কারণ থাকে। হয় সে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার গ্রহণ করে অথবা কম। কিন্তু উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খায় অথচ শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে না, এ রকম আরও কিছু কারণ থাকে, যে জন্য ধীরে ধীরে তার ওজন বাড়তে থাকে। সবার ওজন কিন্তু একই কারণে বাড়ে না। তাই ওজন কমানোর উপায়ও কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটা সব সময় ব্যক্তিভিত্তিক, একজনের উপায় অন্যের সঙ্গে মিলবে না। এগুলো নির্ভর করে শরীরের অনেক বিষয়ের (ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, রোগ ইত্যাদি) ওপর।
ইউটিউবের ভিডিওতে কি তোমার এই বিষয়গুলো জেনেছ? না। সেখানে কিছু কমন নিয়ম থাকতে পারে, তার বেশি কিছু নয়, যা কোনো একজন মানুষের জন্য সম্পূর্ণ তথ্য নয়। ফলে তা এককথায় অনির্ভরযোগ্য। এ জন্য যার কাজ, তাকে দিয়ে করা ভালো। নিজে নিজে, ইউটিউব ভিডিও দেখে বা পুষ্টিবিদ ছাড়া অন্য কারও দ্বারা জাদুকরি পদ্ধতিতে প্রভাবিত হয়ে ওজন কমাতে গেলে অপুষ্টির শিকার হয়ে সৌন্দর্যহানিসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা ও রোগ তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। এ মুহূর্তে তোমার আগে প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা, তারপর ওজন কমানো। যে সমস্যাগুলোতে তুমি ভুগছ, সেসবের চিকিৎসা না করে যদি এ অবস্থায় ওজন কমাতে চাও, তবে তোমার আরও অনেক বেশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি আছে।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
আইন, ডায়েট এবং মন–সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্ন পাঠক পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com
(সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA