কীভাবে উচ্চতা বাড়বে

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ

শামছুন্নাহার নাহিদ

প্রশ্ন ১. আমার বয়স ১৫ বছর। তিন বছর ধরে আমার উচ্চতা ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি রয়ে গেছে। ওজন ৫৫ কেজি। আব্বু বলেন, আমার নাকি উচ্চতা থেমে গেছে। আমার আব্বুর উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং আম্মুর ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।

উচ্চতা বাড়ার জন্য প্রতিদিন আমি ঝুলেছি, বিভিন্ন ব্যায়াম করেছি, থাইরয়েডেন কোনো সমস্যা নেই। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার মাসিক শুরু হয়েছিল, প্রথম কয়েক মাস অসুবিধা হলেও এখন নিয়মিত হয়। অন্য কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। প্রতিদিন শাকসবজি খাই। এক বছর ধরে সকালে নাশতার সঙ্গে ডিম এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ খাই। আমার উচ্চতা বাড়াতে আর কী করতে পারি? কোনো ব্যায়াম কি উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করবে?

নওশিন, চট্টগ্রাম।

উত্তর: নওশিন, মেয়েদের ১৫ বছর বয়সের পর সাধারণত উচ্চতা খুব ধীরে বাড়ে, আবার অনেক ক্ষেত্রে বাড়ানো সম্ভব হয় না। এরপরও বলছি, ছেলে ও মেয়েদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যদি উচ্চতা আশানুরূপ বাড়তে না থাকে, তবে যে কাজগুলো করতে হবে—

খাবার: সারা দিনের খাবার হতে হবে সুষম, বিশেষ করে উচ্চমানের আমিষ (মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি)। শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য দেড় থেকে দুই গ্রাম করে প্রতিদিন সামর্থ্য অনুযায়ী খেতে হবে।

ক্যালরি অনুযায়ী কমপ্লেক্স শর্করা (ভাত, রুটিজাতীয় খাবার) এবং রান্নার তেলের পরিমাণ ঠিক করে নিতে হবে। অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ, বিশেষ করে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন ডি (যা হাড়ের গঠন বাড়িয়ে উচ্চতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে) এর পরিমাণ বাড়াতে হবে।

ঘুম: পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। কারণ, রাতে ঘুমের সময় শরীরের পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন (এইচজিএইচ হরমোন) উৎপন্ন হয়। জন্মের পর থেকে বিভিন্ন বয়সে প্রতিদিন ঘুমের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে, এ ক্ষেত্রে রাতে ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।

ব্যায়াম: প্রতিদিন ব্যায়াম করলে গ্রোথ হরমোন রিলিজ করতে সাহায্য করে। সেই ব্যায়াম যেকোনো ধরনেরই হতে পারে। মানে অ্যারোবিকস (দড়ি লাফ, জাম্পিং, বাস্কেটবল, ভলিবল, সাইকেল চালানো ইত্যাদি) করতে পারো। মনে রাখতে হবে, জন্মের পর থেকে প্রাপ্ত বয়স (১৮ বছর) হওয়া পর্যন্ত—মেয়েদের (১৬ বছরের মধ্যে) এবং ছেলেদের (১৮ বছরের মধ্যে) উচ্চতা বাড়তে থাকে। তাই ১১–১২ বছরেও উচ্চতা কম দেখা গেলে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ ও হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশ্ন ২. আমার বয়স ৩২ বছর। আমি একটি এনজিওতে চাকরি করি। হঠাৎ করে আমার ওজন বেড়ে গেলে খাবার নিয়ন্ত্রণে এনে ৭ কেজি কমিয়ে ফেলেছি, আর ২ কেজি কমালে ডাক্তারের হিসাবে ঠিক থাকে। এখন শুধু পেটে হালকা ভুঁড়ি আছে। তবে এটুকু থাকলেও আমি খুশি। আর ওজন বাড়াতে চাই না। এই ওজন ধরে রাখতে আমি কী ধরনের ডায়েট করব?

রানা, বরিশাল।

উত্তর: ওজন সব সময় স্বাভাবিকে রাখতে চাইলে মূলত দুটি বিষয় জরুরি। প্রথম বিষয়, আপনি আপনার শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী সুষম খাবার খাবেন প্রতিদিন। কোনো বাড়তি খাবার বা উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার (ভাজা-ভুনা, মিষ্টাজাতীয় ইত্যাদি) খাবেন না। যদি কখনো ওই খাবারগুলো খেতে ইচ্ছে করে, তবে আপনার অন্য খাবারের পরিবর্তে এবং পরিমাণ ঠিক রেখে খাবেন।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, ব্যায়াম অর্থাৎ ক্যালরি খরচ। সারা দিন যত খাবার খাবেন, তার বাড়তি ক্যালরি খরচ করতে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে তবেই ঘুমাতে যাবেন। এতে ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। মনে রাখবেন, প্রতিদিন মাত্র ১০০ ক্যালরি খাবার বেশি খেয়ে খরচ না করলে বছরে ৫-৬ কেজি ওজন বাড়তে পারে। তাই ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য খাওয়া এবং ব্যায়াম (খরচ) সমান্তরালে চালিয়ে যেতে হবে।

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

আইন, ডায়েট এবং মন–সংক্রান্ত যে কোনো প্রশ্ন পাঠক পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)

ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো,

প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।
(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA