করোনাভাইরাস কি চুলে বেঁচে থাকতে পারে?

ছবি: প্রথম আলো

ধরুন আপনি একটি সুপার শপের লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনার পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি হঠাৎ কাশি বা হাঁচি দিলেন। এখন আপনার মনে হতেই পারে, আপনার মাথার পেছন দিকটায় করোনাভাইরাসের জীবাণু লেগে গেল কি না। তখন আপনি সংগত কারণেই ভাববেন, বাসায় ফিরে শুধু সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করলেই চলবে না, চুলেও শ্যাম্পু করা উচিত।

চুলে কতক্ষণ করোনাভাইরাস থাকতে পারে তা নিশ্চিত করে জানা যায় না
ছবি: রয়টার্স

কিন্তু আসলেই কি কোভিড-১৯ চুলে বেঁচে থাকতে পারে? কিংবা আরও নির্দিষ্ট করে বললে, করোনাভাইরাস কোনো ধরনের ঝাঁকুনি লেগে কারও চুলের বেণিতে পৌঁছাতে পারে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনটা ঘটার কথা নয়।

প্রত্যেকবার বাইরে থেকে ফিরে চুল ধোয়ার প্রয়োজন নেই
ছবি: রয়টার্স

সার্স কোভ-টুসহ যেকোনো ভাইরাস মানুষের চুলে জড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু এর মানে এই নয় যে চুলে লেগে থাকা সেই ভাইরাস আপনাকে অসুস্থ করে তুলবে। শরীরের বাইরে থাকা অবস্থায় করোনাভাইরাস খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে যায়।

অন্য কথায় বললে, ভাইরাস আপনার চুলে বা এ রকম কোনো জায়গায় লেগে থাকতে পারে কিন্তু এটি আপনার শরীরে প্রবেশ করলে আপনাকে অসুস্থ করে দেওয়ার মতো শক্তিশালী অবস্থায় থাকে না। অবশ্য যদি আপনার চুল চিবানোর অভ্যাস থাকে, তাহলে আলাদা কথা। তবে এই অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিন।

সত্যি বলতে কি, এখন পর্যন্ত একটা গবেষণাও নেই যেখানে অন্তত প্রমাণিত, চুল থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। চুল কিংবা দাড়িতে কতক্ষণ থাকে, সেটাও প্রমাণিত নয়। হতে পারে কয়েক দিন বা কয়েক ঘণ্টা। সুতরাং এর অর্থ এই নয় যে প্রতিবার বাইরে থেকে ফিরে চুলে শ্যাম্পু করবেন। আর সেটা বাস্তবসম্মত যেমন হবে না, তেমনি এতে আপনার চুলেরও ক্ষতি হবে।

চুল নিয়ে অকারণে চিন্তিত হওয়ার চেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়। অতএব আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে যৌক্তিকভাবেই আপনার চুলে জীবাণু এসে পড়লেও তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা খুবই কম।

কিছু বিশেষজ্ঞ তাই আশ্বস্ত করছেন এই বলে, চুল নিয়ে অকারণে চিন্তিত হওয়ার চেয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই বাঞ্ছনীয়। অতএব আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে কেউ হাঁচি বা কাশি দিলে যৌক্তিকভাবেই আপনার চুলে জীবাণু এসে পড়লেও তাতে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা খুবই কম। তার চেয়ে বেশি ভয়ের কারণ বাইরে বেরিয়ে যেখানে-সেখানে হাত দেওয়া আর সময়মতো হাত না ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার না করা। আর সেই হাত দিয়ে চুল স্পর্শ করলেই বরং চুলে জীবাণু লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থেকে যায়।

চুল থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কার্যত সম্ভব নয়, কারণ আপনার চুল তা সে মুখমণ্ডল বা মাথারই হোক, তাতে ত্বক থেকে নিয়মিত এক ধরনের তেলের প্রলেপ পৌঁছায়।

চুল থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কার্যত সম্ভব নয়, কারণ আপনার চুল তা সে মুখমণ্ডল বা মাথারই হোক, তাতে ত্বক থেকে নিয়মিত এক ধরনের তেলের প্রলেপ পৌঁছায়। এই তৈলাক্ত প্রলেপের কারণে যেকোনো জীবাণুর পক্ষেই চুলে বসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া এই প্রলেপের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের প্রভাবে জীবাণু দ্রুত মরে যায়।

ছবি: রয়টার্স

তাই সাধারণভাবে বললে চুল থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যদি আপনি তারপরও চিন্তিত হয়ে পড়েন, তাহলে বেশি বেশি গোসল করতে পারেন বা শ্যাম্পু করতে পারেন। বাচ্চারা স্কুলে বা বাইরে গেলেও একই কাজ করতে পারেন।

এই ভাইরাসের বিস্তার কমাতে প্রতিবার বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরা এবং ঘরের বাইরে কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এড়িয়ে চলা বরং বেশি উপযোগী। ঘরের বাইরে থাকলে অন্যদের থেকে ছয় ফুট বা তারও বেশি দূরত্বে থাকুন। এবং অবশ্যই বারবার হাত পরিষ্কার করুন; কিন্তু প্রতিবার বাইরে থেকে ফিরে শ্যাম্পু না করলেও চলবে।

তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি