খাবারে অরুচি, কী করবেন

খাবার কম খেলেও খেয়াল রাখতে হবে সেই খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কম না বেশি। মডেল: দীপা, ছবি: অধুনা

ক্ষুধামান্দ্য, খেতে ইচ্ছা না করা, মুখে কিছু ভালো না লাগা বা খাবারে অরুচি—এই ধরনের সমস্যা অনেকেরই হয়। কখনো সাময়িক, হয়তো দু-চার দিনের জন্যও কিংবা বদহজমের কারণে, কখনো আবার দীর্ঘ মেয়াদে থাকে। নানা কারণে খাবারে অরুচি হতে পারে আমাদের।

গর্ভাবস্থায় ও বাড়ন্ত শিশুদের ক্ষেত্রেও খাবারে অরুচি হতে দেখা যায় প্রায়ই। দীর্ঘদিন খাবারে অরুচি হলে তা আসলে চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেকেরই দীর্ঘ মেয়াদে খাবারে অরুচির সমস্যাটি দেখা দিচ্ছে।

অরুচি উপসর্গটি সাধারণত নিচের রোগগুলোর কারণে হয়ে থাকে।

গ্যাসের সমস্যা বা বদহজম: গ্যাস বা বদহজম হলে পেটের ওপরের অংশে, তলপেটে বা পেটজুড়ে ব্যথা কিংবা অস্বস্তি অনুভূত হয়। সেই সঙ্গে ক্ষুধামান্দ্যও দেখা দেয়। উল্টাপাল্টা খাওয়ার পর দু–এক দিন এ রকম থাকতে পারে। আবার পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের নানা রোগের কারণেও খাবারে অরুচি হতে পারে।

লিভার বা যকৃতের সমস্যা: স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি লিভারজনিত রোগে খাবারে অরুচি হয়। একিউট হেপাটাইটিস বা জন্ডিস এর প্রথম লক্ষণই হলো তীব্র অরুচি। ক্রনিক লিভার ডিজিজেও অরুচি থাকে।

ক্যানসার: ক্যানসারে আক্রান্ত হলে রোগীর মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একধরনের অনীহা দেখা দেয়। অরুচি ক্যানসার রোগীদের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় অরুচি বিভিন্ন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। সাধারণত পাকস্থলী, যকৃৎ, প্যানক্রিয়াস, আন্ত্রিক ক্যানসারেই অরুচি তীব্র হয়।

মানসিক সমস্যা: মানসিক চাপ, অবসাদ, ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা ইত্যাদি মানসিক কারণেও খাবারের প্রতি অনীহা হতে পারে। এ ছাড়া ওজন কমা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাও ক্ষুধামান্দ্যের সৃষ্টি করে।

মুখের সমস্যা: মুখে ছত্রাক সংক্রমণ বা ঘা হলে খাবারের স্বাদ পাওয়া যায় না এবং খাবার গ্রহণে অসুবিধা হয়।

কৃমির সংক্রমণ: কৃমির সংক্রমণ মূলত শিশুদের শরীরের ওপর বেশ প্রভাব ফেলে। কৃমি শিশুর পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে সেখানে নানা রোগ সৃষ্টি করে, সঙ্গে খাবারে রুচিও কমে যায়।

ভিটামিনের অভাব: শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে শরীরে নানা ধরনের রোগ আক্রমণ করে এবং শরীরের স্বাভাবিক গঠনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। হঠাৎ ক্ষুধা কমে যায় এবং খাবারের রুচি থাকে না।

বেশি সময় ধরে পেট খালি না রাখা, প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর অল্প পরিমাণে হলেও খাবার খাওয়া, কিডনি ও হৃদ্‌রোগীদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা, চাপমুক্ত থাকা ও ভিটামিনযুক্ত তাজা খাবার অরুচি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় খাবারে অরুচি বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই দীর্ঘ সময় এই অরুচি থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।

ডা. সামিউল আউয়াল, আবাসিক চিকিৎসা, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা