গর্ভবতীদের মাথাব্যথা

বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাইগ্রেন সচেতনতা সপ্তাহ। মাইগ্রেন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন করতে এসকেএফ আয়োজন করেছে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের। এর ষষ্ঠ পর্বের বিষয় ছিল ‘গর্ভবতী মায়েদের মাথাব্যথা’। এদিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনাজ পারভিন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী।

সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনাজ পারভিন

গর্ভবতীদের প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, কেন?

প্রাথমিক কিছু কারণে মাথাব্যথা হয়। যেগুলোকে আমরা প্রাইমারি হেডেক বলি। এটা হয় দুশ্চিন্তা থেকে, শারীরিক পরিবর্তনের মানসিক চিন্তা থেকে। আবার মাইগ্রেনের ব্যথাও হতে পারে। এমনকি কোনো ইনফেকশন থেকেও এই ব্যথা হতে পারে। কানের সমস্যা, সাইনোসাইটিস, স্ট্রোক, মাথায় আঘাত থেকে শুরু করে করোনা, ডেঙ্গু—এসব কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে। কোনো কারণে মাথায় রক্তক্ষরণ হলে বা মাথার ভেতরে রক্ত জমলে মাথাব্যথা হয়। গর্ভকালীন একলাম্পসিয়া বা প্রি–একলাম্পসিয়া যেটা হয়, এর কারণেও প্রেশার বেড়ে মাথাব্যথা হতে পারে।

গর্ভকালীন সময়ভেদে মাথাব্যথার প্রকোপ কেমন হয়?

প্রথম ১২ সপ্তাহে দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা আর মাইগ্রেনটা বেশি হয়। আগে মাইগ্রেন থাকলে ধরন পাল্টায়। হরমোনজনিত বা বমি হওয়ার জন্যও মাথাব্যথা হতে পারে। আমরা আগে রোগীকে জিজ্ঞেস করি ওনার মাথাব্যথার ইতিহাস আছে কি না। দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা সাধারণত বিকেলে শুরু হয়। সূর্য ডোবার পর থেকে বাড়তে থাকে। এ ব্যথা মাথার পেছন দিকে বেশি হয়। ঠিকমতো ঘুমালে ঠিক হয়ে যায়। অন্যদিকে মাইগ্রেন হলো ‘আধকপালি ব্যথা’। মাথার যেকোনো এক দিকে ব্যথা করে। ৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। অনেকের আবার এস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে আগের মাথাব্যথা সেরে যায়।

মাইগ্রেন কি মা বা বাচ্চার কোনো ক্ষতি করে

সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনাজ পারভিন

না, বড় কোনো ক্ষতি করতে পারে না। বমি বমি লাগে, খেতে ইচ্ছা করে না, ঘুমের অসুবিধা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে, তবে মা বা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় না। একটা অসুবিধা হয় মায়ের, সেটা হলো সাধারণত আমরা মাইগ্রেনে যে ধরনের ওষুধ দিই, গর্ভাবস্থায় সেগুলো দিই না। এটা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। আসলে গর্ভাবস্থায় যত কম ওষুধ দেওয়া যায়, ততই ভালো। তাই আমরা প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ দিই, কাউন্সেলিং করি, ভিটামিনযুক্ত খাবার ও সবুজ শাক খেতে বলি। এ ছাড়া ঠিকমতো ঘুমাতে বলি, ঠান্ডা জায়গায় থাকতে বলি, হালকা ব্যায়াম করতে বলি। অনেকে মাইগ্রেনের ব্যথা থাকলে বাচ্চা নিতে চান না, ভয় পান। এই ভয় অমূলক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগে মাইগ্রেন থাকলে গর্ভাবস্থায় উল্টো মাইগ্রেন সেরে যায়।

গর্ভাবস্থায় মাথাব্যথার জন্য কী পরীক্ষা করতে হবে

সাধারণত কোনো পরীক্ষা লাগে না। তবে মাথাব্যথার সঙ্গে জ্বর, প্রেশার, খিঁচুনি, হাত–পা অবশ হয়ে যাওয়া, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া—এগুলো থাকলে পরীক্ষা দিই। ইনফেকশনের জন্য রক্ত বা ইউরিনের পরীক্ষা এবং স্ট্রোকের কথা ভাবলে এমআরআই করি। তবে এক্স–রে বা সিটি স্ক্যান সাধারণত দিই না। এর রেডিয়েশনে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তবে মাথাব্যথায় অজ্ঞান হয়ে গেলে বা একলাম্পসিয়া হলে দেরি করা যাবে না। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

পিরিয়ডকালীন মাথাব্যথা

মাইগ্রেনের প্রবণতা মেয়েদেরই বেশি। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা হয়। অনেকের আবার পিরিয়ডের সময় মাথাব্যথা হয়। পিরিয়ডের দুই দিন আগে থেকে পিরিয়ডের তিন দিন মাথাব্যথা হয়। কেননা, এ সময় এস্ট্রোজেনের পরিমাণ কমে যায়। এ সময় ঠান্ডা জায়গায় থাকলে ভালো। প্যারাসিটামল, ক্যাফেইন, এসপিরিন আর বমির ওষুধ দিলে ঠিক হয়ে যায়। যাদের কোনো ওষুধেই কাজ হয় না, তাদের হরমোন ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। মেনোপজের সঙ্গে মাইগ্রেন কমে যায়। কেননা, ওই সময় এস্ট্রোজেনের তেমন কাজ থাকে না। তাই শরীরে এস্ট্রোজেন থাকে।

পরামর্শ

গর্ভকালীন মাথাব্যথা খুবই সাধারণ ব্যাপার। এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। দুশ্চিন্তা করলেই বরং মাথাব্যথা হবে। এই সময় চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। ঠিকমতো খেতে হবে, ঘুমাতে হবে। আর যদি অনেক ব্যথা করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকের আবার গর্ভাবস্থায় চকলেট খেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু চকলেট খেলে মাথাব্যথা হয়। এ ক্ষেত্রে সংযম করাই ভালো।