চোখে পানি না থাকলে...

ধুলাবালু চোখে ঢুকলেও হেত পারে চোখের শুষ্কতা। ছবি: অধুনা
ধুলাবালু চোখে ঢুকলেও হেত পারে চোখের শুষ্কতা। ছবি: অধুনা

বেশি পানিতে যেমন বন্যা হয়, কম পানিতে তেমনি হয় খরা। চোখে বেশি পানি কিংবা কম পানি বিভিন্ন রোগের জন্যই হয়। বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ এবং পরিবেশদূষণও এখানে বেশি। ঢাকাসহ অন্যান্য শহরের বাতাসে সিসা, দস্তা ও ধুলাবালুর পরিমাণ বাড়ায় অনেকেই চোখের নানা সমস্যায় ভুগছেন। সাধারণত চোখে বাইরে থেকে কিছু ঢুকলে, চোখে কাটা বিঁধলে প্রাথমিকভাবে চোখে অতিরিক্ত পানি ঝরে। অতিরিক্ত পানি ঝরার কারণ গরম ও ঠান্ডা বাতাস, ধোঁয়া, কম আর্দ্রতা এবং অনেকক্ষণ ধরে চোখের ব্যবহারের কারণে হতে পারে।
অন্যদিকে, চোখ শুষ্ক হওয়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গের রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মুখ শুকনো সিনড্রম, যা চোখ শুকনো হওয়ার অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতিতে শিশুদের চোখের শুষ্কতা দেখা দেয়। এই ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি সাধারণত ডায়রিয়া, বদহজম, ভিটামিন ‘এ’ বহনকারী খাবার কম খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে কর্নিয়ার ক্ষতসহ চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন জন্মনিরোধক বড়ি, অ্যান্টিহিসটামিন, বিটারুকার, এট্রপিন, ফেনোথায়াজিন-জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে চোখের শুষ্কতা হতে পারে। যেকোনো কেমিক্যালে চোখ পুড়ে গেলে চোখে শুষ্কতা হয়। তা ছাড়া ট্রাকোমো রোগে চোখের শুষ্কতা হয়। মাথায় খুশকি হলে চোখের পাতায় প্রদাহ হয়। এর ফলেও চোখের শুষ্কতা দেখা দিতে পারে।
ফেসিয়াল নার্ভে কোনো ক্ষত হলেও চোখ শুকাতে পারে। প্যাসপিগাম কনজাংটাইভা ও কর্নিয়াল জেরোসিস ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে, স্টিভেন জনসন সিনড্রম প্রভৃতি কারণেও চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়। যেকোনো কারণেই চোখের শুষ্কতা হোক না কেন, তার কারণ উদ্ঘাটন করা অত্যন্ত জরুরি, অন্যথায় চোখের শুষ্কতার কারণে চোখের মণি ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি লোপ পায় এবং একবার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেলে তা ফিরিয়ে আনা কিন্তু দুরূহ ব্যাপার।

চিকিৎসা
চোখের শুষ্কতা দূর করার পদ্ধতি হিসেবে প্রথমেই কারণগুলো খুঁজে বের করে চিকিৎসা করা উচিত। ভিটামিন ‘এ’-এর ব্যবহার এবং কারণ অনুসারে ওষুধ ব্যবহার করলে আরোগ্য লাভ হয়। অপারেশনের মাধ্যমে চোখের শুষ্কতা দূর করা যায়। সব ক্ষেত্রেই কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার উত্তম। মিথাইল সেলুলোজ, সফট কন্টাক্ট লেন্স, প্যারোটিভ ডাক্ট প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও চোখ শুকানোর প্রতিকার করা যায়।

অধ্যাপক শরফুদ্দিন আহমেদ : উপ-উপাচার্য ও চেয়ারম্যান, কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।