টিকার পাদটীকা

যথাযথ সময়ে নবজাতকের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া নিয়ে মা-বাবা অনেক সময় দুশ্চিন্তায় পড়েন। কখন কোন টিকা, একসঙ্গে এতগুলো টিকা দেওয়া ঠিক কি না, শিশু অসুস্থ থাকা অবস্থায় টিকা দেওয়া যায় কি না, কোনো কারণে তারিখ পেরিয়ে গেলে কী করতে হবে—এসব বিষয় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।
এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন মৃধা বলেন, শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে আবশ্যক টিকাগুলোর সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করতে হয়। এগুলো হচ্ছে বিসিজি (যক্ষ্মা), পোলিও, ডিপিটি (ডিপথেরিয়া-হুপিংকাশি-ধনুষ্টঙ্কার), হেপাটাইটিস বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হাম, নিউমোকক্কাল-জনিত নিউমোনিয়া, রুবেলা টিকা। এ ছাড়া রয়েছে টাইফয়েড, বসন্তসহ অন্যান্য কিছু টিকা, যা বাধ্যতামূলক নয়।

সময়মতো টিকা না নিলে কী হতে পারে?
সময়সূচি অনুযায়ী সব টিকা নিলে শিশু ওপরে লেখা রোগগুলো থেকে রক্ষা পাবে। সময়মতো টিকা না নিলে মারাত্মক সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না-ও হতে পারে। এতে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি অনেক সময় মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা ও উত্তর
একই টিকার দুটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতি থাকা উচিত। ২৮ দিনের আগেই একই টিকার ২য় ডোজ গ্রহণ করলেও তা প্রথম ডোজ হিসেবেই গণ্য হবে।
একই দিনে একাধিক টিকা দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই।
কোনো কারণে তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস বি তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পরে দিতেও সমস্যা নেই।
পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ওই সময়ে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পরও ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়।
বিসিজি টিকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ঘা হওয়ার কথা। ঘা হলে ভয়ের কিছু নেই। বরং না হলে পুনরায় টিকা দিতে হয়।
৯ মাস বয়সের আগে হামের মতো র্যা শ হয়ে থাকলেও যথাসময়ে মানে নয় মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দেবেন।
টিকা দেওয়ার পর অনেক সময় জ্বর আসতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। অনেক জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কখন টিকা দেওয়া যাবে না?
ছোটখাটো অসুস্থতা যেমন জ্বর, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণে টিকাদান স্থগিত করার কারণ নেই। মারাত্মক অসুস্থ শিশু, খিঁচুনি হচ্ছে এমন শিশু এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেমন কেমোথেরাপি গ্রহণকারী বা এইচআইভি আক্রান্ত শিশুকে টিকা না দেওয়াই উচিত। যেসব শিশুর স্নায়ুরোগ আছে, তাদের ডিপিটি না দিয়ে ডিটি দেওয়াই ভালো।

টিকা কি শুধু শিশুদের?
অনেকেরই ধারণা, কেবল নবজাতক ও ছোট শিশুদেরই টিকা দেওয়া হয়। বড় বাচ্চাদের কোনো টিকা নেই। আসলে তা নয়। কৈশোরেও কিছু টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। শিশু বয়সে ইপিআই শিডিউলে থাকা সব কটি টিকা পাওয়া সত্ত্বেও কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে যাদের অবস্থান, তাদের রোগপ্রতিরোধ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অনেক সময় প্রয়োজন পড়ে। যেমন
ইপিআই শিডিউলে থাকা হুপিং কাশির যে তিন ডোজ ভ্যাকসিন শিশু তার ‘ডিপিটি’তে পেয়েছে, দেখা যায় ৫ থেকে ৮ বছরের মাথায় তার কার্যকারিতা অনেকাংশে লোপ পায়। এর ফলে অনেক যুবা ও বৃদ্ধ হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হতে পারে। একইভাবে এ বয়সে এসে শিশুর ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, ভেরিসেলা জলবসন্ত, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মেনিনজাইটিস ও জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
বালিকা ও কিশোরীদের ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টিকা অল্প বয়সেই শুরু করার নিয়ম।

কোথায় ভ্যাকসিনেশন সেবা পাবেন?
বাংলাদেশের সর্বত্র টিকাদান কার্যক্রম চলছে সরকারিভাবেই। নিকটস্থ সদর হাসপাতাল, উপজেলা হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা ক্ষেত্রবিশেষ কোনো কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে খোঁজ নিলেই জেনে নিতে পারবেন কখন কখন সেখানে টিকা দেওয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচি-সংবলিত সাইনবোর্ড এ টিকাদান কর্মীর নাম, মোবাইল নম্বর ও টিকাদানের তারিখ লেখা থাকে। টিকার মেয়াদ ঠিক আছে কি না, সেটা জেনে নেবেন।
লেখক: চিকিৎসক