ডায়েটের সময় চুল পড়া ঠেকাতে কী করব

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ

শামসুন্নাহার নাহিদ
ছবি: অধুনা

প্রশ্ন: আমার অনেক চুল পড়ছে। ভয়ে একবার ভেবেছি ডায়েট করা ছেড়ে দিই। কিন্তু ছাড়িনি। ডায়েটের সময় চুল পড়া ঠেকাতে কী করতে পারি?

রফিকুল বারি, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: আপনি কোন ধরনের ডায়েট করছেন, তা উল্লেখ করেননি। যদি তা ওজন কমানোর জন্য হয়ে থাকে, তাহলে ওই ডায়েটে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ও আমিষের অভাব হয়েছে।

চুল পড়ার অনেক কারণ থাকে। চুল পড়াকে বলা হয় এন্ডোজেনিক এলোপেসিয়া, যার মূল কারণ ডিএইচটি নামের একটি হরমোন। এই হরমোন বেড়ে গেলে চুলে রক্তসঞ্চালন কমে যায়, চুল ঝরতে শুরু করে। এ ছাড়া ভিটামিন বায়োটিনের অভাবে খাবারে বেশি লবণ মাথার ত্বকের কোষে পানি জমিয়ে চুলের গোড়া নরম করে চুল পড়তে সাহায্য করে। আবার কিছু ওষুধ (ডিপ্রেশন, আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি রোগের) সেবনের কারণেও চুল পড়তে পারে। অন্যদিকে চুলের ৯১ শতাংশ প্রোটিন হলো ক্যারোটিন। ক্যারোটিনাইজেশন পদ্ধতিতে চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি নিয়ে চুলের বৃদ্ধি হয়। এ জন্য চুল পড়া রোধে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

যেসব খাবার খেতে হবে

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ খেতে হবে। যেমন: মাংস ও ডিম—যা প্রোটিন, বায়োটিনসমৃদ্ধ। এই বায়োটিন থেকে চুলের প্রোটিন ক্যারোটিন তৈরি করে চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।

  • তৈলাক্ত মাছ, যাতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা–৩, ওমেগা–৬ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন-ই থাকে, যা চুলের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।

  • ভিটামিন-এ, বেটা-ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যা ‘সিবাম’ তৈরিতে সাহায্য করে। এই সিবাম চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটা মিলবে মিষ্টি আলু, পালংশাকের মতো খাবার থেকে।

  • ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এই ভিটামিন চুলের স্টেনডেন ধরে রাখার সহকারী কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে।

  • বাদাম, বিচি–জাতীয় খাবার, সয়াবিন বীজ, অর্থাৎ ভিটামিন বি, ই, জিঙ্ক, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও বিশেষ করে স্পারমিডিন আছে, যা লম্বা চুলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া চুলে ভেষজ তেল ব্যবহার করা ভালো। নারকেলের তেল, আমন্ড তেল, জলপাই তেল ও মিনারেল চুলের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।

আরও কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারেন

  • চুল প্রতিদিন শ্যাম্পু করবেন না।

  • প্রতিদিন চুল ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।

  • চুলে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে বেশি করে আঁচড়াতে হবে।

  • ১০-১২ সপ্তাহ পরপর ভেঙে যাওয়া চুলের আগা ছেঁটে বা কেটে ফেলতে হবে।

  • চাপ (স্ট্রেস) কমাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।

এরপরও যদি সমাধান না হয়, ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।