দিনে কয়টা ডিম খাবেন

ফেসবুকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে একটা স্ট্যাটাসের দিকে চোখ আটকে গেল। সেখানে এক নারী লিখেছেন, ‘আজ মুরগি ডিম না দিলে যে কী হতো’। মন্তব্যের ঘরে আবার একজন মজাচ্ছলে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেছেন, ‘এভাবেই যুগে যুগে মোরগদের অবদান অস্বীকার করে আসা হচ্ছে’। একজন আবার সহমত প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমরা ডিম আনি ডিম খাই’। ডিম যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অনেকেরই ব্রেকফাস্টের টেবিল যেন ডিম ছাড়া পূর্ণতা পায় না। জেনে নেওয়া যাক দিনে নিশ্চিন্তে আপনি কয়টা ডিম খেতে পারেন।

চোখ বন্ধ করে প্রতিদিন খান একটি ডিম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

পৃথিবীতে যত খাবার আছে, সেগুলোর মধ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারগুলোর অন্যতম ডিম। একটা কোষ থেকে একটা পূর্ণাঙ্গ মুরগি হতে যত পুষ্টি লাগে, তার সবকিছুই আছে ডিমের ভেতর। তবে কুসুমে অবস্থিত উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের জন্য কিছু দুর্নামও কুড়িয়েছে ডিম। যদিও কোলেস্টেরল শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা একটা স্ট্রাকচার মলিকিউল, যেটা কোষের গঠনের জন্য আবশ্যক।

কোলেস্টেরল টেস্টোস্টেরন, অ্যাস্ট্রোজেন, কর্টিসলের মতো প্রয়োজনীয় হরমোনের নিঃসরণ ঘটাতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অকালমৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের লিভারও কিন্তু প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরলের জোগান দেয়। যখন খাবার থেকেই অনেকখানি কোলেস্টেরল আসে, তখন লিভার কোলেস্টেরলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে ব্যালান্স করে।

ডিমে আছে হরেক পুষ্টি
ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রশ্ন হলো, দিনে নিশ্চিন্তে কয়টা ডিম খাওয়া যাবে? এর উত্তরে এভারকেয়ার হসপিটালসের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘এটা আসলে নির্ভর করছে সারা দিনে আর কী কী প্রোটিন খাওয়া হচ্ছে, তার ওপর। যদি ডিমের সঙ্গে খাদ্যতালিকায় মাছ, ডাল, মাংস—এগুলোও থাকে, তাহলে একটা ডিম খাওয়াই ভালো। অন্য কোনো প্রথম শ্রেণির প্রোটিন না থাকলে তিন বেলা তিনটাও খাওয়া যেতে পারে। তবে আমরা পরামর্শ দিই একটার বেশি না খাওয়ার। কেননা, বিভিন্ন উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করলে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। যেমন ভিটামিন এ, ডি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ডালে ফাইবার, আয়রন, অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে।’

‘হ্যাপি ব্রেকফাস্টে’র চেহারা অনেকটা এরকম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিমের বিকল্প নেই। ডেঙ্গু বা কোভিডের সময়ে, গর্ভাবস্থায়, কোনো অপারেশনের পর, পুড়ে গেলে দিনে অন্য প্রোটিনের সঙ্গেও দিনে একটার বেশি ডিম খাওয়া যেতে পারে। কেননা, এসব সময়ে শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বেশি থাকে। আর ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিন হিসেবে সেই প্রোটিন খরচ হয়ে যায়। এ ছাড়া জন্মের ছয় মাস পর থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত প্রতিদিন একটা করে ডিম খাওয়া যাবে।

অনেকে বলেন, বয়স চল্লিশের বেশি হয়ে গেলে তখন কুসুম না খেলেই ভালো। এটা একদম ভুল কথা বলে জোর দিয়ে বলেন তামান্না চৌধুরী। বিশেষ কোনো অসুখ যেমন কিডনির অসুখে ডিমের কুসুম খেতে নিষেধ করা হয়। অন্যথায় বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ডিমের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ে। তাই নিশ্চিন্তে প্রতিদিন একটা ডিম খান। মাঝেমধ্যে দুটোও খেতে পারেন। এমনকি দুম করে একদিন তিনটা ডিম খেয়ে ফেললেও ক্ষতি নেই। ডিম চুল আর ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।