ধ্বনিবৃত্তি এক স্বল্প পরিচিত ব্যারাম

অনোম্যাটো ম্যানিয়া রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অংশ হয়ে যায়। মডেল: মুসকান।
ছবি: সুমন ইউসুফ

এই অসুখের নামটা উঠল, কারণ রোগটি হয়েছে পরিচিত এক অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের। রোগটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘অনোম্যাটো ম্যানিয়া’। নাসিরুদ্দিন শাহ নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বললেন এ রোগের কথা। এ এমন এক রোগ, একই শব্দ বা শব্দবন্ধ অকারণই বলতে থাকেন আক্রান্ত ব্যক্তি। তা–ও বারবার। আবার অনেক সময় বাক্য বা কবিতাও বলতে থাকেন বারবার।

কেউ একে উপভোগ করলেও যিনি এমন পুনরুচ্চারণ করেন, তিনি হয়ে যান অস্থির। এই বলার তাগিদ ঘুমের সময়ও ছাড়া সম্ভব হয় না। নাসিরুদ্দিন শাহের জন্ম ১৯৫০ সালের ২০ জুলাই ভারতের উত্তর প্রদেশে। তিনি ভারতের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ও মঞ্চ অভিনেতা। পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার আর পদ্মশ্রী। স্ত্রী রত্না পাঠক। তিনিও বিদুষী। দুজনই বই পড়তে ভালোবাসেন। একে অপরকে বলেন, ‘ওই বইটা পড়ো।’ পরে আর পড়া হয়ে ওঠে না। অভিনয় করছেন, তবে চুটিয়ে নয়। বাংলাদেশে কল্পবিজ্ঞান সিনেমায় অভিনয়ের কথা আছে। ছবির পরিচালক অমিত আশরাফ পরিচালিত ‘প্রজেক্ট অমি’–তে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

এবার রোগটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলি। এ এক মানসিক অসুখ, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো বাক্য, প্রবাদ বা শব্দ অকারণই বলতে থাকেন বারবার। অনোম্যাটো ম্যানিয়া হলে একটি বিশেষ শব্দ থাকে স্মরণে। রোগটি এ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের অংশ হয়ে যায়। চিত্রশিল্প, বই পড়া বা লেখালেখির শখ থাকলে এমন রোগের আশঙ্কা বাড়ে।

এটি মানসিক অসুখ হলেও এর তেমন চিকিৎসা নেই। একে নিয়ে বাঁচতে হবে আর বেশি ব্যতিব্যস্ত হলে অবশ্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হয়। তখন আছে চিকিৎসা। সিবিটি থেরাপি হতে পারে নিদান। অবস্থা গুরুতর হলে বিষণ্নতা বা দুশ্চিন্তার ওষুধ যোগ করতে হতে পারে। এর নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই বললেই চলে।

নাসিরুদ্দীন শাহ অনোম্যাটো ম্যানিয়ায় আক্রান্ত।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

বৌদ্ধিক আচরণ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, রোগটি ওসিডি বা অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার বা শুচিবাই বা বাতিক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমন হলে সেই আক্রান্ত ব্যক্তি একটি বিশেষ শব্দ যেমন—‘উল্লাস’, অকারণই ব্যবহার করতে শুরু করেন।
অনোম্যাটো ম্যানিয়াকে বলা যায় বিশেষ শব্দের ব্যাপারে অবসেশন। এই রোগের নাম চয়ন করেন আধুনিক নিউরোলজির জনক নামে আখ্যায়িত জিম মারটিন শারকট। ১৮৯০ সালে বিজ্ঞানী কুলেরি এই রোগের সঙ্গে মৃগী রোগের সম্পর্ক পান। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এমন সব অদ্ভুত রোগের উল্লেখ আছে। বিরল হলেও তা অনেক নামকরা ব্যক্তির হয়ে সাড়া জাগায়।