পারকিনসনস নিয়েও সুস্থ থাকা যায়
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হাঁটাচলা, কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবেই একটু ধীর হয়ে যায়। কিন্তু যদি কারও চলাফেরা অত্যধিক ধীরগতি হয়ে যায়, হাত-পা কাঁপে অথবা শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কষ্ট হয়, তাহলে তা পারকিনসনস নামের স্নায়ুরোগের লক্ষণ হতে পারে। যদিও এটা বয়স্ক মানুষের রোগ; কিন্তু অল্প বয়সীদেরও হতে পারে।
লক্ষণসমূহ
● হাঁটাচলা, ওঠা-বসার ধীরগতি।
● অনিয়ন্ত্রিত হাত-পা কাঁপা।
● হাত-পা অনড় বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
● শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করতে কষ্ট হওয়া; বিশেষ করে উঠে দাঁড়ালে বা হাঁটতে গেলে।
● এ ছাড়া স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা ইত্যাদি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
পারকিনসনস রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না, রোগীর ইতিহাস ও প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা নিখুঁতভাবে নির্ণয় করতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এমআরআই পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
পারকিনসনস নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ, নিরাময়যোগ্য নয়। এ রোগের ওষুধ নিয়মিত ও দীর্ঘমেয়াদি সেবন করতে হয়।
পারকিনসনস রোগের চিকিৎসা মূলত তিন রকম হতে পারে; পরামর্শ, ওষুধ ও ব্যায়াম।
মস্তিষ্কের ডোপামিনের অভাবে পারকিনসনস হয়। তাই লিভোডোপা জাতীয় ওষুধ পারকিনসনস রোগের জন্য খুবই কার্যকর। লিভোডোপা ছাড়াও আরও অনেক ওষুধ পারকিনসনস রোগে ব্যবহার করা হয়; যা চিকিৎসকেরা রোগের বিভিন্ন পর্যায় অথবা লক্ষণ দেখে রোগীকে সেবন করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
পারকিনসনসের প্রায় সব ওষুধেরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করে রাখবেন না।
নিয়মিত ব্যায়াম সব পারকিনসনস রোগীকে ভালো রাখে। অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম এ ধরনের রোগীর জন্য খুবই কার্যকর।
পারকিনসনস একেবারে সুস্থ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো রোগ নয়। নিয়মিত ওষুধ ও ব্যায়াম, এই ধরনের রোগীকে দীর্ঘ সময় প্রায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সহায়তা করে। সুতরাং পারকিনসনসকে দূর করে নয়, বরং পারকিনসনসকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের বসবাস করা শিখতে হবে।
ডা. নাজমুল হক মুন্না, সহকারী অধ্যাপক (নিউরোলজি), মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
আগামীকাল পড়ুন: ঈদে গরুর মাংস খাবেন, কিন্তু...